রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ঘরে বাইরে কোথাও নিরাপত্তা নেই। কারাগারগুলোও পরিণত হয়েছে মৃত্যু উপত্যকায়। দেশের ৬৮টি কারাগার একেকটি টর্চার সেল। যেখানে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যু আতঙ্কে থাকেন রাজনৈতিক বন্দিরা। সোমবার বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার তাদের দখলদারিত্ব ধরে রাখার জন্য পুরো দেশকে নরকপুরিতে পরিণত করেছে। ঘরে বাইরে কোথাও নিরাপত্তা নেই। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। সরকারের প্রতিপক্ষদের জীবন রাষ্ট্রীয় নজরদারী-বন্দুকের নলের নীচে বন্দি। বাইরের মতো কারাগারগুলোও পরিণত হয়েছে মৃত্যু উপত্যকায়। দেশের ৬৮টি কারাগার একেকটি টর্চার সেল।
যেখানে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যু আতঙ্কে থাকেন রাজনৈতিক বন্দিরা। সেখানে গায়েবি মিথ্যা মামলায় সুস্থ সবল নেতাকর্মীদের ধরে নির্যাতন করে কারাগারে নিক্ষেপের পর লাশ বানিয়ে বের করা হচ্ছে। কারাগার থেকে বেরুচ্ছে লাশের সারি।
তিনি বলেন, সত্যকে মিথ্যায় এবং মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শেখানো বুলি বলানোর জন্য বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে রিমান্ডে নিয়ে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হচ্ছে। পাশবিক নিপীড়ন-নির্যাতনে কারাগারে বন্দি অসুস্থ বিএনপি নেতাকর্মীদের বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয়। হাসপাতালে ভর্তি করে তাদের জীবন বাঁচানোর কোন চেষ্টা করা হয় না। নিষ্ঠুর দমনের বিভিষিকায় দেশে বিরোধী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার অভিযান চালানোর অংশ হিসেবে কারাগারে বন্দি বিএনপি নেতাকর্মীদের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
রিজভী বলেন, কেউ যাতে টু শব্দ করতে না পারে সেজন্য কারাগারের ভিতরে বাহিরে চলছে বিরোধী দলের সক্রিয় নেতাদের জীবন হরণে নানাবিধ অমানবিক আচরণ। কারাবন্দিদের নির্যাতন করা হচ্ছে অবর্ণনীয় পৈশাচিক কায়দায়। চিকিৎসা না দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। অসুস্থ বন্দিকে হাত-পায়ে শিকল পরিয়ে কারা হাসপাতালের ফেলে রাখা হচ্ছে। কারাগারের দম বন্ধ করা সেলে দিনরাত লকআপে রেখে গরু-ছাগলের খাবারের জন্য প্রযোজ্য অতি নিম্নমানের খাবার দিয়ে অসুস্থ বানিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। মৃত্যুর পর সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায় এড়ানোর জন্য গল্প সাজিয়ে মিথ্যাচার করছে। তবে জেল হেফাজতে মৃত্যু ও হত্যার দায় এড়াতে পারবে না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কারা কর্মকর্তারা। প্রতিটি মৃত্যু ও হত্যার জন্য তাদেরকে একদিন বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, একতরফা পাতানো নির্বাচনী খরচ জোগাতে শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রী-এমপি-নেতারা সিন্ডিকেটের হাতে ছেড়ে দিয়েছে নিত্যপণ্যের বাজার। বাজারে চলছে আওয়ামী অলিগার্কদের ডাকাতি। দুইদিন আগে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। ১০০ টাকার পেঁয়াজ দুই দিনে প্রায় ৩০০ টাকায় তুলেছে। সরকার সিন্ডিকেটের কাছে আত্মসমর্পণ করে তাদের হাতে সব ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনী ক্যারিকেচার নিয়ে উন্মাদের মতো আচরণ করছে। দেশে পেঁয়াজ রসুন ডাল চালের দাম নিয়ে চলছে নৈরাজ্য। সেদিকে বিন্দু মাত্র ভ্রূক্ষেপ নেই। ব্যবসায়ীরা যেমন খুশি দাম নির্ধারণ করছে, সরকারের কোনো বিধিবিধানের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। সরকার যদি নির্বাচিত হতো বা জনগণের ভোটের প্রয়োজন পড়তো তাহলে দলীয় ব্যবসায়ীদের হাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতো না।
দুদিনে ৪ মামলায় ৮৩ জনকে সাজা
বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশী রায়ে রোববার এবং সোমবার ৪টি মামলায় ৮৩ জনকে সাজা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে রাজধানীর তেজগাঁও থানার ১০ বছর আগের একটি মিথ্যা মামলায় যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও সাবেক কাউন্সিলর আনোয়ারুজ্জামানসহ ১০ জন নেতাকর্মীকে ফরমায়েশী রায়ে ৩ বছর করে সাজা প্রদান করে আদালত। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়নসহ ৪০ জন নেতাকর্মীকে ২০১৩ সালের কলাবাগান থানার একটি মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি রায়ে দেড় বছর কারাদন্ড দিয়েছে ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আলী হায়দার। দক্ষিণ মহিলা দলের সভাপতি রাজিয়া আলমসহ ২৫ জন নেতাকর্মীকে ২০১৮ সালের বংশাল থানার একটি মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় ফরমায়েশী রায়ে ৩ বছর করে সাজা দিয়েছেন আদালত। কোতয়ালী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজিমসহ ৮ জন নেতাকর্মীকে একটি ভুয়া ও বানোয়াট মামলায় ফরমায়েশি রায়ে দেড় বছর কারাদন্ড দিয়েছে ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদ চৌধুরী। আমি এসব মিথ্যা মামলা ৪টির ফরমায়েশি রায়ের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি সাজা প্রত্যাহারের জোর আহ্বান জানাচ্ছি।
গত ২৪ ঘণ্টায় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, মামলা, আসামি ও আহতদের তালিকা তুলে ধরেন রিজভী। তিনি জানান, এসময়ে গ্রেপ্তার হয়েছে ১১০ জন নেতাকর্মী, আহত হয়েছে ১৫ জন এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে ৫টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৪৩৬ জন নেতাকর্মী।