রিজভী
জনগণ আগামী ৭ই জানুয়ারি দেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন দিবস উদযাপন করবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, তুমুল আন্দোলনে-জনজোয়ারে এই নির্বাচনী নাটক ভণ্ডুল হয়ে যাবে। শনিবার সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে এখন হাসি-তামাশা, বাণিজ্য ও প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। জনগণের কাছ থেকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। আর জনপ্রতিনিধিত্ব এখন শেখ হাসিনার দান-দক্ষিণা, খয়রাত, বিলি-বণ্টন, ভাগ-বাটোয়ারা, উপহার-করুণায় পরিণত হয়েছে। ২০১৪ সালে বিনাভোটে অটোপাসের নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের নিশিরাতের ভোট ডাকাতির পর এবার ইলেকশন ভাঁওতাবাজির নামে সিলেকশন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে টার্গেট করে করে অর্থ এবং এমপি বানানোর প্রলোভনে কিংসপার্টি-ভুঁইফোড় পার্টিতে রাজনৈতিক নেতাদের ঢুকানো হচ্ছে। তবে কোন নীতিবান, আদর্শবাদী, দেশপ্রেমী রাজনীতিককে তারা নিতে পারছে না। কতিপয় ডিগবাজি মার্কা-ভ্রস্টচারী রাজনৈতিক ব্যক্তিকে নির্বাচনী রঙ্গমঞ্চের অভিনেতা বানাতে কব্জা করেছে। টাকার বিনিময়ে খরিদ হওয়া এইসব রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কেউ কেউ এখনই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছেন।
কারণ তারা টাকা ও ক্ষমতার মুলোর লোভে পড়ে ডিগবাজি দেয়ার পর এখন বুঝতে পারছেন তাদের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে না। পাতানো খেলার সাজানো নির্বাচনে ‘হার হাইনেস’ যাকে যাকে চাইবেন, তারাই হবেন এমপি, তারাই হবেন ক্ষমতাশালী। শোনা যাচ্ছে, শেখ হাসিনার জোটসঙ্গী একটি দলের শীর্ষ নেতা এই পাতানো ভুয়া সিলেকশনের নির্বাচনে যেতে না চাওয়ায় রাষ্ট্রীয় এজেন্সি দিয়ে সেই নেতাকে একটি পাঁচ তারকা হোটেলে জিম্মি করা হয়। পরে তাদের নির্বাচনের ঘোষণা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। এইভাবে জোড়াতালি দিয়ে নির্বাচনের পথে হাঁটছে মাফিয়া চক্র।
রিজভী বলেন, একদিকে বলছে নির্বাচনে আসুন অন্যদিকে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীসহ আন্দোলনে সক্রিয় ও সাহসী নেতাদের টার্গেট করে বেছে বেছে তাদেরই কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। পুরনো মামলায় সাজা দেয়ার হিড়িক শুরু হয়েছে। নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে দুই বছরের নিচে কারোর সাজা হচ্ছে না। কারণ দুই বছরের সাজা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রতিবন্ধক। এসব কারাদণ্ড প্রদান করা হচ্ছে ‘আজব আদালত’ থেকে-যেখানে মৃত নেতা, গুম হওয়া নেতাদেরও রেহাই নেই। মৃতদেরও সাজা দিচ্ছেন শেখ হাসিনার পুতুল আদালত। গত দেড় মাসে বিএনপির ৫৮২ জন নেতাকর্মীকে প্রহসনের বিচারে দণ্ডিত ঘোষণা করা হয়েছেন। আসামিদের অনুপস্থিতিতে চার্জ গ্রহণ ও কারাগারে বন্দি অবস্থায় আসামিকে সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা শোনার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করে দণ্ড ঘোষণা করা হচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তারের বর্ণনা দিয়ে রিজভী বলেন, সারাদেশে ৩২৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া ১৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৪৩৫ জনকে। এছাড়া তফসিল ঘোষণার পর ৪২০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৩৮ মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৬১২৫ জনকে।