ছবি:সংগৃহীত
সরকার পতনের একদফা দাবিতে বিরোধী জোটের ডাকা চতুর্থ দফায় ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের প্রথম দিন ও আগের রাতে ১২ গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
শুধু রাজধানীতে রাতে ৮টি গাড়ি ও দিনে দুটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়। ঢাকার বাইরে গাজীপুর-বরিশালে দুই গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া ফার্মগেট ও গুলিস্তানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে অবরোধের সমর্থনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়ক-মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতারা। এ সময় তারা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে, গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করেন। অবরোধের সমর্থনে মিছিল করেছে জামায়াত, এলডিপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। বিরোধী জোটের অবরোধের কারণে সারা দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন ছিল রাজধানী ঢাকা। চলাচল করেনি দূরপাল্লার বাস। আতঙ্কে রাজধানীতে যান চলাচল ছিল কম।
এদিকে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের দক্ষিণ সুরমা সংযোগ সড়ক এলাকায় সকাল ৮টার দিকে সড়কে গাছের গুঁড়ি, বাঁশ ফেলে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল থেকে এক স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। খাগড়াছড়িতেও গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। ওদিকে বগুড়ায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে বিক্ষোভ করেন অবরোধকারীরা। লক্ষ্মীপুরে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। রোববার সকালে বেড়ির মাথা, বাস টার্মিনাল, বিসিক ও দালাল বাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। এরপর ঢাকা-রায়পুর মহাসড়কসহ বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন তারা। ওদিকে রাজশাহী শহরে চন্দ্রিমা থানা বাইপাস রাস্তায় যুবদল, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অবরোধ করে মিছিল করেন।
অবরোধের প্রথম দিনে রাজধানী ও বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। সকালে রাজধানীর আইডিয়াল স্কুলের সামনে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে মিছিল করেন দলটির নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে চৌরাস্তার মাথায় নেতাকর্মীদের নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। ছাত্রদলের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) রাশেদ ইকবাল খানের নেতৃত্বে রাজধানীর বনশ্রীতে মিছিল ও পিকেটিং করা হয়েছে। গুলশান-১ থেকে গুলশান-২ নম্বর অভিমুখে মিছিল ও অবরোধ করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। বিজয় নগর মোড় থেকে হোটেল ৭১ পর্যন্ত এই মিছিল হয়। এতে নেতৃত্ব দেন ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন শ্যামল। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে সোয়ারিঘাটে নৌপথ অবরোধ করেছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সকালে ছাত্রদল যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়ালের নেতৃত্বে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা নৌপথ অবরোধ করেন।
মিছিল ও পিকেটিং করেছে তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। সকালে রাজধানীর বাংলামোটর (ইস্কাটন রোডে এলাকায়) সড়ক অবরোধ করে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা রফিকুল ইসলাম ও সাদ মোর্শেদ পাপ্পা শিকদারের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াছের নেতৃত্বে তেজগাঁও রেলস্টেশন এলাকায় এই ঝটিকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া রাজধানীর অন্তত অর্ধশতাধিক স্পটে মিছিল করেছে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এদিকে কুমিল্লা উত্তর জেলা কৃষকদলের উদ্যোগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুটুমপুরে অবরোধের সমর্থনে মিছিল হয়। অবরোধের সমর্থনে বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর নেতৃত্বে সকাল ৮টার দিকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের দ্বিতীয় বাইপাস সুজাবাদ এলাকায় অবস্থান নেন।
এদিকে রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬৫ জন বিএনপি’র নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ৪০ জন, মৃত্যু হয়েছে ১ জনের এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে ১৩টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৪৮৫ জনকে।
ওদিকে রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। অবরোধের প্রভাব ছিল রাজধানীতেও। গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচলও ছিল কম। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। অবরোধে অপ্রীতিকার ঘটনা এড়াতে সারা দেশে মোট ১৫২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ও তার আশপাশের জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে ২৭ প্লাটুন। ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে অতিরিক্ত নিরাপত্তায় ১৩টি পয়েন্টে আনসার বসিয়েছে প্রশাসন। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের ৪৬০টি টহল টিম মোতায়েন ছিল।