Banglar Chokh | বাংলার চোখ

বিএনপির কর্মসূচি দমনে পুলিশ কর্মকর্তারা ঘন ঘন বৈঠক করছেন 

রাজনীতি

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২০:৪২, ২১ অক্টোবর ২০২৩

সর্বশেষ

বিএনপির কর্মসূচি দমনে পুলিশ কর্মকর্তারা ঘন ঘন বৈঠক করছেন 

রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমরা বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পারছি— ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘন ঘন বৈঠক করছেন কীভাবে বিএনপি’র কর্মসূচিকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করা যায়। ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের হিড়িক থামছেনা, আরও জোরদার করা হয়েছে। সুতরাং এটি অত্যন্ত সুষ্পষ্ট যে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন দলবাজ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ভোটারদেরকে ভোটকেন্দ্রে না আসতে কি পরিমাণ নৃশংসতা চালাবে তারই ইঙ্গিত এখনই পাওয়া যাচ্ছে, আবারও ভোটের আগের রাত্রে নৌকা মার্কায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে ফেলতে তারা সর্বোচ্চ রক্তাক্ত সহিংসতায় লিপ্ত থাকবে। ইতোমধ্যেই দলবাজ প্রশাসনের মনোরঞ্জনের জন্য জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের উৎকোচ দেয়া শুরু হয়েছে।

শনিবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা আওয়ামী খুনে সিন্ডিকেটের গডমাদার বলে মন্তব্য করে রিজভী বলেছেন, স্বঘোষিত জনদরদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ অন্যান্য সাঙ্গ—পাঙ্গরা বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীদেরকে সরাসরি হত্যার হুমকি দিচ্ছে। ওবায়দুল কাদের বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে সরাসরি বলেছেন ‘ডান্ডা মেরে ঠান্ডা’ করবো না, মাথায় ইউরেনিয়াম ঢেলে দিয়ে ঠান্ডা করে দিবো।

রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের আরেকজন মন্ত্রী বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন— কেউ হুমকি দিলে কি করতে হবে আওয়ামী লীগ সেটা জানে’। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, শেখ হাসিনা নিজেই প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকি দেন। সুতরাং এতে উৎসাহিত হয়ে মন্ত্রী ও নেতারা একযোগে সর্বনাশা সহিংসতা আর হত্যার হুঁশিয়ারী দিয়ে যাচ্ছেন। আপনাদের এও মনে আছে, শেখ হাসিনা গত বছর বেগম খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে বলেছেন, টুস করে তাকে পদ্মা নদীতে ফেলে দিবেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিএনপি’র কর্মসূচির পূর্বে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, আমাদের বিরুদ্ধে যে হাত তোলা হবে তা ভেঙ্গে ফেলতে হবে।’ অসুস্থতায় মূমুর্ষ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী সকল মানবতা, মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়ে বিলাপ করে বলেছেন, তার বয়স তো আশি’র উপরে। সময় হয়ে গেছে। এই সর্বনাশা বক্তব্য দেশনেত্রীকে উন্নত চিকিৎসা না দিয়ে মৃত্যুর পথে ঠেলে দেয়ার সুষ্পষ্ট ইঙ্গিত। আসলে শেখ হাসিনা আওয়ামী খুনে সিন্ডিকেটের গডমাদার।

বিএনপির সিনিয়র এ নেতা বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপি’র উদ্যোগে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশ উপলক্ষে বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা ও জনগণকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের নেতা— মন্ত্রীরা বিএনপি’র কর্মসূচি নিয়ে নানামূখী হুমকি এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে হত্যার তাদের যে ঐতিহ্য রয়েছে সেটিকে মনে করিয়ে দিচ্ছে, আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য। তাদের পরাক্রমশালী গুণ্ডা ও খুনিদের অতীতের খুন— জখমের কীর্তি বারবার দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, একদিকে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী নেতারা সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছেন, আবার অন্যদিকে তারা দিচ্ছেন সহিংসতার হুমকি। বিএনপি’র কর্মসূচি মোকাবিলার সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে তারা আওয়াজ তুলছেন। এই সমস্ত হুমকি কি সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্ব লক্ষণ? পাশাপাশি পুলিশ কর্মকর্তারা শেখ হাসিনার সুরে সুর মিলিয়ে বলছেন—২৮ অক্টোবর সহিংতা করলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। বিএনপি’র সমাবেশের আগেই পুলিশের এই হুঁশিয়ারী আবারও প্রমাণ করলো—শেখ হাসিনার হাতে লালিত পালিত পুলিশ বাহিনী গণতন্ত্র, সুশাসন, সুষ্ঠু নির্বাচন তথা জনগণের বিপজ্জনক প্রতিপক্ষ।

বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ইতোমধ্যে ডিসি ও ইউএনওদের ২৬১টি বিলাস বহুল গাড়ী (ষ্পোর্টস ইউটিলিটি) কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ৬১টি ডিসিদের জন্য এবং বাকীগুলো ইউএনওদের জন্য। ডলার সংকট ও প্রচণ্ড রিজার্ভ ঘাটতির মধ্যে গাড়ি কেনার উদ্যোগ শেখ হাসিনার অধীনে একতরফা নির্বাচনে প্রশাসনকে ব্যবহার করার এক মোক্ষম ঘুষ হিসেবে দেখছে জনগণ।

রিজভী বলেন, একটি দেশের সরকারি কর্মচারীদের স্বরুপ দেখলেই সেই রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য বুঝা যায়। বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও জনপ্রশাসনের নির্লজ্জ দলবাজ কর্মকর্তাদের ভূমিকাতেই সুষ্পষ্ট হয় যে, বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের মাত্রা কত ভয়াবহ। আওয়ামী নেতারা প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন গণতন্ত্রকামী মানুষদের বিরুদ্ধে। এদের কেউ কেউ বলেছেন— কর্মসূচির নামে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, 'আমি পুলিশ অফিসারদের বলতে চাই— ৭ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে বিএনপি কি সহিংসতা করেছিল? এর কি কোনো প্রমাণ আছে? তাহলে কেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে রক্তাক্ত প্রান্তর বানিয়েছেন? কেন ওই দিন দারুস সালাম থানা জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মকবুল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করলেন? কার্যালয়ে হানা দিয়ে ৪৭০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করলেন? ওই দিনই আপনাদের পৃষ্ঠপোষকতায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ওয়ারী থানা যুবদল নেতা ফয়সাল মেহবুব মিজু’র পিতা মিল্লাত হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা করে? এই হত্যার জন্য কি আপনারা দায়ী নন?

তিনি বলেন, জনগণের টাকায় বেতন নিয়ে শেখ হাসিনার মোসাহেবি করতে গিয়ে সেনাবাহিনীর মেজর থেকে শুরু করে ছাত্র, যুবক, শ্রমিক সাধারণ মানুষকে যেভাবে হত্যা, নির্যাতন এবং হয়রানি করে যাচ্ছেন তা মানবতার বিরুদ্ধে এক জঘন্যতম অপরাধ। শেখ হাসিনা আপনাদেরকে কত টাকার সম্পদ বানিয়ে দিয়েছেন যে, একটা অবৈধ সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য সারাদেশের জনপদের পর জনপদে রক্ত ঝরাচ্ছেন, আর লাশের তালিকা দীর্ঘ করছেন? তবে আপনাদেরকে বলে রাখি, এবার জনগণ আর হারবে না।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়