ছবি:সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনা সংঘের (ইসকন) নেতা ও সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ প্রভু ব্রহ্মচারীর মুক্তি দাবি করে গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন কলামিস্ট ও গবেষক ফরহাদ মজহার। স্ট্যাটাসটি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এরপর বিকালে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে ইসকন সমর্থকদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) সাইফুল ইসলাম আলিফ।
এ ঘটনায় ফরহাদের ওপর আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন নেটিজেনরা। তারা বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আসামি চিন্ময়ের মুক্তির দাবি করে ইসকন সমর্থকদের আন্দোলনকে উসকে দিয়েছেন ফরহাদ। এজন্য তার গ্রেফতার দাবি করেন অনেকেই। একপর্যায়ে নেটিজেনদের তোপের মুখে সুর পালটে বুধবার আরেকটি স্ট্যাটাস দেন ফরহাদ মজহার। সেখানে তিনি আইনজীবী আলিফ হত্যার নিন্দা জানিয়ে বিচার দাবি করেন।
ফরহাদ মজহার বলেন, আলিফ হত্যায় অপরাধী বলে যে ছয়জনকে ইতোমধ্যেই সরকার সনাক্ত করেছে তাদের বিচার চাই।
তিনি আরও বলেন, সাইফুলের রক্তের সঙ্গে যদি আমরা বেইমানি না করি তাহলে বুঝতে হবে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ বাংলাদেশে একটি দাঙ্গা লাগাবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং তা কার্যকর করছে। যারা দাঙ্গা লাগাতে চায় তারাই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে হিংসা এবং ঘৃণা ছড়াচ্ছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতিও আমার অনুরোধ সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকদের আবেগ ও উপলব্ধিকে আমলে নিন। পালটা ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়াবেন না। বাংলাদেশের জনগণের ঐক্য ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখুন। হিংসা বা দাঙ্গা আমাদের কারোরই পথ হতে পারে না।
তবে স্ট্যাটাসে ইসকন নেতা চিন্ময়ের মুক্তি চাওয়ার কারণে তিনি যে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন তার জবাবে ফরহাদ মজহার কিছু লেখেননি। এছাড়া আলিফ হত্যার বিচার চেয়ে তিনি যে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তাতে যেন কেউ মন্তব্য করতে না পারে সেজন্য কমেন্ট সীমাবদ্ধ (লিমিট) করে রেখেছেন। ফলে নেটিজেনরা চাইলেও তার স্ট্যাটাসের জবাবে কোনো মন্তব্য করতে পারছেন না। এছাড়া যাদের মন্তব্য করার অ্যাক্সেস রয়েছে তাদের কোনো মন্তব্য দেখা যাচ্ছে না। এছাড়া ইমোজিতে ‘হা হা, লাইক ও রাগান্বিত’ বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াও লিমিট করে রেখেছেন তিনি।
ধারণা করা হচ্ছে, জনরোষ এড়াতে ফরহাদ মজহার এই পন্থা অবলম্বন করেছেন। যাতে তার স্ট্যাটাসের কমেন্ট বক্সে কেউ সমালোচনা করতে না পারেন।
তবে ফরহাদ মজহারের স্ট্যাটাসে একজনের মন্তব্য দেখা যাচ্ছে। সেখানে তানভীর হোসাইন নামে একজন ফরহাদকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, আপনি ভারতে চলে যান। ফরহাদের স্ট্যাটাসে কেউ মন্তব্য করতে না পারলেও অনেকেই তার সমালোচনা করে নিজেদের ব্যক্তি ওয়ালে লিখছেন।
লেখক ও সাংবাদিক খোমেনী ইহসান বলেন, চট্টগ্রামে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হত্যার ঘটনার পর চিন্ময়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা ফরহাদ মজহারকে গ্রেফতার করা অনিবার্য হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তখনো চিন্ময়ের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ছিল। এরকম লোকের কাছে ফরহাদ মজহার বিনা মতলবে দেখা করতে যায়নি। ফরহাদ দেখা করে আসার পরের পরিস্থিতি এখন সবার কাছেই পরিষ্কার। হিন্দুত্ববাদীরা এপিপি সাইফুলকে জবাই করে হত্যা করেছে৷ এরকম সন্ত্রাসবাদী ঘটনার পর জড়িত হিন্দু জঙ্গিদের পাশাপাশি ফরহাদ মজহারকেও গ্রেফতার করা দরকার। মনে রাখেন বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে জঙ্গী সংগঠন জেএমবি আদালতে বিচারক-আইনজীবী হত্যা করেছিল, ওই জেএমবির পক্ষেও তখন ফরহাদ মজহার সরব ছিল। এখন হিন্দুত্ববাদী জঙ্গিদের পক্ষেও ফরহাদ সরব এবং তাদের সঙ্গে দহরম মহরমে লিপ্ত। এ অবস্থায় ফরহাদ মযহারকে গ্রেফতার করার কোনো বিকল্প নাই।
আইনজীবী গুলবাদিন গালিব হইসান বলেন, ফরহাদ মজহার আসলে সব ধর্ম পালন করা লোক। আবার কোনো ধর্মই সে মানে না। সে একজন শ্রেফ ধান্ধাবাজ। নামাজ না পড়লেও পূজা করে। সে ইসলামের জন্য ‘শহিদ’ হতে চায় আবার ইসকনের সঙ্গে মিলে মুসলমানদের হত্যার পথ বানায়। সে কোন ধর্মের সেটা বুঝাও কঠিন।
এছাড়া বিভিন্ন ইমোজি ঘেঁটে দেখা গেছে, আইনজীবী আলিফ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ফরহাদ মজহারের বক্তব্যে রাগ প্রকাশের ইমোজি দিয়েছেন অধিকাংশ নেটিজেন। বহু মানুষ হা হা রিয়্যাক্ট দিয়েছেন। অনেকেই আবার লাইকও দিয়েছেন।
এর আগে ১৮ নভম্বের চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ ইসকন পরিচালিত শ্রীশ্রী পুণ্ডরীক ধাম মন্দির পরিদর্শন করেন ফরহাদ মজহার। ওই সময় পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ ও ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী তাকে স্বাগত জানান। সে সময়কার চিন্ময়-ফরহাদের আলিঙ্গন করা কয়েকটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এই ছবি নিয়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র সমালোচনা হয়।