ছবি:সংগৃহীত
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন, দুর্নীতির কারণে ব্যক্তিগত থেকে সামাজিক জীবনে মানুষ একটা অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে আছে।
অস্বস্তিকর বললে কম বলা হবে, তবে কখনো কখনো সংকটাপন্ন অবস্থার মধ্যে আছে।
বৃহস্পতিবার ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবির কার্যালয়ে জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদের (আনকাক) দ্বিতীয় ও পঞ্চম অধ্যায়ের বাস্তবায়ন পর্যালোচনার সময় সুলতানা কামাল এমন মন্তব্য করেন।
আনকাকের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন টিআইবির অন্যান্য কর্মকর্তা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদের অনুচ্ছেদগুলোর আইনত বাস্তবায়ন মোটামুটি হলেও প্রায়োগিক বাস্তবায়ন নিম্ন পর্যায়ের। টিআইবির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সুলতানা কামাল বলেন, জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদের দ্বিতীয় ও পঞ্চম অধ্যায়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে দেশের অগ্রগতি কতখানি হয়েছে, একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জ কী আছে, সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে। গবেষণার ওপর নির্ভর করে সুপারিশও দেওয়া আছে।
সুলতানা কামাল এই তথ্যগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরতে গণমাধ্যমকে আহ্বান জানান। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে সরকারের বিরাট দায়-দায়িত্ব আছে। সরকার নাগরিক সমাজকে এই প্রক্রিয়ায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিল আবার টিআইবির নিজস্ব দায়িত্ব হিসেবেও এটা করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন আইনের অগ্রগতি হলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যকারিতা মধ্যম পর্যায়ের। তবে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক যোগসূত্র রয়েছে এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্র নিম্ন পর্যায়ের।
এ ছাড়া সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট বা সিপিটিইউ কার্যকারিতা উত্তম পর্যায়ের। তবে রাজনৈতিক প্রভাব ও হস্তক্ষেপের কারণে সরকারি ক্রয়ে এখনো সমস্যা আছে। তথ্য কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য প্রত্যাশিত পর্যায়ের নয়। ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের কার্যকারিতা মধ্যম পর্যায়ের তবে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ বিরল।
টিআইবির সুপারিশে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) স্বাধীনতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত এবং রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবমুক্ত রাখাসহ ১৬টি সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে আছে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধন করে ২০১২ সালের সংস্করণে যেসব বিষয়কে মানি লন্ডারিংয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল সেগুলো পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়। সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের নিয়োগ ও অপসারণের একটি আর স্বাধীন শর্তের উপন্যাস্ত করা, সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদ সম্পর্কিত তথ্য নিশ্চিতকরণে সম্পদের বাৎসরিক বিবরণ জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরি করার কথা বলা হয় সুপারিশে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘তথ্য সংগ্রহে সরকারি দপ্তরসমূহে প্রবেশাধিকার সীমিত ছিল। অনেক ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। আবার অনেক কর্মকর্তা তথ্য দিতে চাননি।’
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বিদায়ী চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. পারভীন হাসানের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন।