Banglar Chokh | বাংলার চোখ

জনজীবনে স্বস্তি ফিরলে কারফিউ প্রত্যাহার

মিনিষ্ট্রি

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০০:১০, ২৪ জুলাই ২০২৪

সর্বশেষ

জনজীবনে স্বস্তি ফিরলে কারফিউ প্রত্যাহার

ছবি:সংগৃহীত

সকল গ্রেডের সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। গতকাল গুলশানে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত এ প্রজ্ঞাপন পড়ে শোনান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ৯ম থেকে ২০তম গ্রেডের সরকারি চাকরিতে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হবে। বাকি ৭ শতাংশ নিয়োগ হবে কোটায়। এ সময় ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং হল খুলে দেয়া; শিক্ষার্থীসংশ্লিষ্ট মামলা; কারফিউ এবং হতাহত শিক্ষার্থীদের ব্যাপারেও কথা বলেন মন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘সমতার নীতি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রজাতন্ত্রের কর্মে প্রতিনিধিত্ব লাভ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্থাৎ সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্ব-শাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে/কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল গ্রেডে নিম্নরূপভাবে কোটা নির্ধারণ করা হইলো- ক. মেধাভিত্তিক ৯৩%; মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫%; ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ১% এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১%। নির্ধারিত কোটায় যোগ্যপ্রার্থী পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদসমূহ সাধারণ মেধা তালিকা হইতে পূরণ করা হইবে।’ শুরুতে আইনমন্ত্রী কোটা নিয়ে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের রায় এবং কোটা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারির প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। বলেন, একদিকে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এর সুযোগ নিয়ে কিছু মহল এই আন্দোলনকে অন্যদিকে প্রবাহিত করার জন্য সহিংসতা অবলম্বন করেন। 

এক পর্যায়ে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা বলেন-আন্দোলন করার পাশাপাশি তারা আলোচনায় বসতে চান।

 
আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আদেশে বলেছি- যখনই তারা বসতে চায় আমরা রাজি আছি। সেই সংবাদ সম্মেলনে আমি অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলেছি-কোটা বিরোধী আন্দোলনের যে মামলাটা আপিল বিভাগে আছে, সেই মামলাটার ৭ তারিখে শুনানি। এটা এগিয়ে আনার জন্য আমরা ব্যবস্থা করছি। সেইদিনই বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল এর আবেদনের প্রেক্ষিতে এ মামলাটা এগিয়ে এনে ২১শে জুলাই শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগ ২১শে জুলাই এই মামলার শুনানি করেন। একটা স্ববিস্তার রায় দেন। সেখানে আপিল বিভাগ সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে কোটার ব্যাপারে একটা নির্দেশনা দেন। সেই নিদের্শনায় তারা বলেন, মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গ ১ শতাংশ। আজকে আপনাদের সামনে ঘোষণা দিতে চাই আমরা আমাদের কথা রেখেছি। এই প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। এ প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সরকারের থেকে যা যা করণীয় হয়েছে তার সারমর্ম তুলে ধরে তিনি বলেন, কোটা সংস্কারে সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন আমরা তা প্রতিপালন করেছি; সহিংসতার জন্য যে বিচার বিভাগীয় তদন্তের কথা বলা হয়েছিল আমরা এক সদস্যবিশিষ্ট বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তিনি কাজ করা শুরু করেছেন। পরিস্থিতি শান্ত হলে তিনি স্পটগুলো ঘুরে দেখবেন; সহিংসতায় সাধারণ শিক্ষার্থী যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার ব্যাপারে সরকার দেখভাল করবেন; মামলার তথ্যাদি তারা আমাদের দিলে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী যারা কোটা আন্দোলনে ছিলেন তাদের ব্যাপারে অবশ্যই আমরা দেখবো।
 তিনি বলেন, সরকার আপিল বিভাগের রায়ের প্রতিপালন করেছে। আপিল বিভাগের রায়ের একটা দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন বদলানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। যেহেতু সেটা নেই। তারা যেভাবে দিয়েছেন আমরা সেভাবে এটা প্রতিপালন করেছি। এখন শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা ও ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তার পরিবেশ তৈরি করতে সরকার কাজ করবে। মূলত এটা ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন, আমরা সংস্কার করেছি। এখন তাদেরও একটা কর্তব্য আছে যেটা জনগণ মনে করে তাদেরও করা উচিত। সেটা হলো এখন তাদের স্ব স্ব জায়গায় ফিরে গিয়ে পড়াশোনা করা উচিত। আর শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা ও ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তার পরিবেশ তৈরি করতে সরকার কাজ করবে। কোটা সংস্কার করে সংসদে আইন পাস করতে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, এটা কখনো আইন ছিল না। এটা সব সময় সরকারের নীতির সিদ্ধান্ত- পরিপত্র এবং প্রজ্ঞাপন দ্বারাই বলা হতো। ভবিষ্যতে যদি কোনো সমস্যা হয়, আমাদের যদি কখনো মনে হয় এটা পরিবর্তন করা বা বাতিল করে দেয়া, কিংবা আরেকটু কমানো সেটাও যদি প্রয়োজন হয় আমরা করতে পারি। এখন আমার মনে হয় সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন সেটাতে হাত দিয়ে আইনের শাসনের প্রতি মারাত্মক হাত দেয়া সেটা আমরা করবো না। তিনি বলেন, আমরা তাড়াতাড়ি শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সচেষ্ট। আপনারা আশা করতে পারেন তাড়াতাড়ি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে যাবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে হলগুলো খুলে দেয়া হবে। 
সংবাদ সম্মেলনে একজন প্রশ্ন করেন, আল-জাজিরাসহ কিছু সংবাদমাধ্যমে ছাত্রদের দাবি সম্পর্কে ভুল তথ্য চলে আসছে। যেটি সম্পর্কে আমরা জেনে আসছি। আমরা এ রকমও শুনেছি যে, এ আন্দোলনে যারা ছিলেন, দুর্বৃত্ত ছিলেন তাদেরও পকেট রাউটার ওয়াইফাই সরবরাহ করা হয়েছে বাংলাদেশের কোনো অপারেটর গ্রুপ থেকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, ঢাকার দূতাবাসের মাধ্যমে ইতিমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, আল- জাজিরার লোকাল প্রতিবেদক রয়েছে তাদের সঙ্গে কথা বলে যেন যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে। 

জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এ প্রশ্নের মাধ্যমে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, এটা শুধু কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের কোটা সংস্কারের আন্দোলন ছিল না। এটা জঙ্গিরা, বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী ছাত্রশিবির এবং ছাত্রদলের। যারা জঙ্গি হয়ে এ আন্দোলনে সংযুক্ত হয়ে দেশ নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। 
অন্য একজন প্রশ্ন করেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও বলেছেন যে, বাংলাদেশে শিক্ষার্থী মারা গেছে। এবং বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে ভারত সরকারকে একটা প্রতিবাদও দিয়েছে। 
জবাবে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে শান্তিপূর্ণ মুভমেন্টের মধ্যে সহিংসতা ঢুকানোর যে পরিকল্পনা সেটি তারা আগে থেকেই করেছে। তাদের মধ্যে প্রস্তুতি ছিল যে, তারা ডেটা সেন্টার জ্বালিয়ে দেবে। ইন্টারনেট থেকে দেশকে আলাদা করে দেবে। ইন্টারনেট না থাকায় আমরাও বিপদে পড়েছি। আমরা গ্লোবালি কমিউনিকেট করতে পারিনি। এ সুযোগে তাদের সিন্ডিকেট ডিসইনফরমেশনের ক্যাম্পেইন করেছে। যেহেতু তারা জানতো তাদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইন্টারনেটকে তারা বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। এটার প্রতিফলন দেখছেন। গ্লোবালি বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ভুল তথ্যগুলো এ কারণেই দিচ্ছে। যে আক্রমণগুলো হচ্ছে এগুলোর কোনো খবর নেই। ছাত্রদের সঙ্গে আমাদের যে যোগাযোগ, শান্তিপূর্ণভাবে যে সমাধান এসবও কিন্তু নেই। সন্ত্রাসীদের আক্রমণের বিষয়ও নেই। 

আরেক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা ধৈর্য ধরেছি। কারণ তারা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছিল। আমরা চাচ্ছি শিক্ষার্থীরা বাড়িতে ফিরে যাক এবং সরকার ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার মতো যথেষ্ট শক্তি-সামর্থ্য রাখে। আর প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বলেছেন যে, হতাহতের ব্যাপারে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। সমস্যা যেহেতু সমাধান করে দিয়েছে। আমাদের বিশ্বাস নতুন করে কোনো সমস্যা তৈরি হবে না। এবং পরিস্থিতির অবনতি হবে না। যদি অবনতি ঘটনানোর চেষ্টা কোনো অপশক্তি করে সেটার ব্যাপারে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেবো। কারফিউ প্রত্যাহারের ব্যাপারে তিনি বলেন, জনজীবনে যখন স্বস্তি আসবে তখন কারফিউ প্রত্যাহার করা হবে। জনজীবনে স্বস্তি এসেছে বলেই প্রথমে দুই ঘণ্টা বিরতি দেয়া হতো এখন চার ঘণ্টা বিরতি দেয়া হচ্ছে। সেজন্য আস্তে আস্তে যত জনমনে স্বস্তি ফিরে আসছে তখনই আমরা কারফিউয়ের মেয়াদ কমিয়ে আনছি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বলেন, আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষার্থে ফাইটব্যাক করতে হয়। আমরা যখন ফাইটব্যাক করেছি তখন সংঘর্ষ তৈরি হয়েছে। সে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এসব হতাহতের জন্য আক্রমণকারীরা দায়ী। প্রতিটা হতাহতের ঘটনায় আমরা নিন্দা জানাই, দুঃখপ্রকাশ করি। বিচারের মাধ্যমে সাজার আওতায় আনা হবে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়