Banglar Chokh | বাংলার চোখ

চলে গেলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি আসাদ চৌধুরী

সাহিত্য কথা

সৈয়দ মোস্তাক আহমেদ ,বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০২:০৮, ৬ অক্টোবর ২০২৩

সর্বশেষ

চলে গেলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি আসাদ চৌধুরী

কবি  আসাদ চৌধুরী

কবি আসাদ চৌধুরী দীর্ঘদিন যাবত শারীরিক নানান জটিলতায় ভুগছিলেন।শারীরিক অবস্থা অবনিত দেখা দিলে গত ১৫ জুন রাতে কবিকে কানাডার টরন্টোর শহরের মাইকেল গ্যারন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।পরের দিন ১৬ জুন অবস্থা শোচনীয় হলে ইন্টেন্সিভ কেয়ারের (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। স্থানীয় সময় গত বুধবার (৫ অক্টোবর) রাত তিনটায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যু কালে কবির বয়েস হয়েছিল ৮০ বছর।

কবির মৃত্যুর সংবাদটি তাঁর ছোট ছেলে জরিপ চৌধুরী নিশ্চিত করেন।

এদিকে কবির মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক কবি আসাদ চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৩ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলার মেহেদীগঞ্জ উপজেলার কুমুদিয়া গ্রামে উলানিয় জমিদার বাড়িতে । 

বাবা মোহাম্মদ আনিছ চৌধুরী মা সৈয়দে মাহমুদা বেগম। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়।
কবি ১৯৫৭ সালের কমদিয়া হাই স্কুল হতে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৯৬০ সালের কবি ব্রজমোহন কলেজে থেকে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা সাহিত্য অধ্যায়ন করেন এবং ১৯৬৩ সালের স্নাতক ও ১৯৬৪ সালে উচ্চতর স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

পড়াশোনা শেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে চাকরিজীবন শুরু করেন। চাকুরি জীবনের ইতি টেনে হতে ১৯৬৪ হতে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন খবরের কাগজে তিনি সাংবাদিকতা করেন।

তবে ১৯৮৫ হতে ১৯৮৮ পর্যন্ত ভয়েস অফ জার্মান বাংলাদেশের সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন। এছাড়া ঢাকার বাংলা একাডেমিতে দীর্ঘকাল চাকরির পর বাংলার একাডেমীর পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে পরে  অবসরে যান কবি।

বাংলা সাহিত্যে সফল পদচারণা ছাড়া ও কবিতা ছাড়াও লিখেছেন শিশুতোষ গ্রন্থ ছড়া,জীবনী গ্রন্থ এবং অনুবাদের কাজও করেছেন।

লেখক পরিচয় এর পাশাপাশি তিনি একজন জনপ্রিয় টেলিভিশন উপস্থাপক এবং একজন বিখ্যাত আবৃত্তিকার  ছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবনে কবি বিয়ে করেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মধ্যপাড়া জুবলি রোডের এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে শাহানা বেগমকে, এই দম্পতির দুই ছেলে এক মেয়ে তিনি।

কবি অবসরে সময় কাটানোর জন্য পরিবারের সদস্যদেরকেই বেছে নেন এবং  ছেলে মেয়ে,নাতি-নাতকার  ও পরিবারের সকলকে নিয়ে সুযোগ পেলেই বসতেন গল্প ও আড্ডায়  অবসর সময়টি এ ভাবেই কাটাতেন।

কবি তার নাট্যজীবনে আমাদেরকে দিয়ে গিয়েছেন কবিতা, গল্প- উপন্যাস, সাহিত্য, ছোটদের ছড়া -গল্প, জীবনী উপন্যাস  এবং টিভি উপস্থাপনা ও তাঁর মধুর কন্ঠের আবৃত্তিতে তিনি অনেক জনপ্রিয় ছিলেন।

কবি আসাদ চৌধুরীর লেখা, তবক দেওয়া পান, জলের মধ্যে লেখাজোখা, মেঘের জুলুম পাখির জুলুম, আমার কবিতা, ভালোবাসার কবিতা, প্রেমের কবিতা, নদীও বিবস্ত্র হয়, বাতাস যেমন পরিচিত, বৃন্তির সংবাদে আমি কেউ নই, কিছু ফল আমি নিভিয়ে দিয়েছি, ঘরে ফেরা সোজা নয় তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ।

এছাড়া প্রবন্ধ সঙ্কলন কোন অলকার ফুল, জীবনীগ্রন্থ সংগ্রামী নায়ক বঙ্গবন্ধু, রজনীকান্ত সেন, স্মৃতিসত্তায় যুগলবন্দী এবং ইতিহাস গ্রন্থ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

কবির মরদেহ দেশে আনা হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। কবির জামাতা নাদিম ইকবাল বলেন, " আমাদের ইচ্ছা কানাডাতেই দাফন করার। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরিবারের সবার সাথে কোথা বলে নেওয়া হবে।"

কবিতার বর্ণাঢ্য জীবনী অর্জন করেছেন ১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমী পুরুষ্কার ও ২০১৩ সালে একুশে পদক। তবে বিদায় বেলা সকলকে কাঁদিয়ে রেখে গেছেন শুধু তাঁর লেখায়।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়