ছবি:সংগৃহীত
৭ই অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি নৃশংসতায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এটি শুধু একটি সংখ্যা নয়। এ থেকে স্পষ্ট গড়ে প্রতিদিন সেখানে প্রায় ৩০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। এ হিসাব সাত দিনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি বাদ দিয়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক ইমার্জেন্সি বিষয়ক পরিচালক রিচার্ড ব্রেনান বলেছেন, তিনি মনে করেন নিহতের এই সংখ্যা বিশ্বাসযোগ্য। ওদিকে ৭ই অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত
গাজার ওপর কমপক্ষে ২৯০০০ বোমা ফেলেছে ইসরাইল। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
যেকোনো যুদ্ধক্ষেত্রেই নিহতের সংখ্যা নিখুঁতভাবে নির্ধারণ চ্যালেঞ্জিং। গাজার চিকিৎসকরা বলছেন, নিহতের এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কারণ, বিধ্বস্ত ভবনগুলোর নিচে চাপা পড়ে যারা নিহত হয়েছেন এবং উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি, তাদেরকে এই সংখ্যার মধ্যে ধরা হয়নি। বিশ্বজুড়ে যেসব যুদ্ধ হয়েছে বা হচ্ছে তাতে কি পরিমাণ মানুষ নিহত হন সেই সংখ্যা নির্ধারণের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ প্রফেসর মাইকেল স্প্যাগাট।
তিনি মনে করেন, গাজা যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ব্যতিক্রমভাবে অনেক বেশি। তিনি ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধে, কলম্বিয়ার গৃহযুদ্ধে, কঙ্গোর যুদ্ধে এবং এখন ইসরাইল ও গাজার যুদ্ধে নিহতদের সংখ্যা নিয়ে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে গাজায় ধারাবাহিক হামলার পর বর্তমান যুদ্ধে যে পরিমাণ মানুষ মারা যাচ্ছেন এবং বৈষম্যমূলকভাবে হত্যা করা হচ্ছে তা অস্বাভাবিক। ২০ হাজার মানুষ নিহতের সংখ্যাটা বুঝিয়ে দেয় যে, গাজার মোট ২২ লাখ মানুষের মধ্যে শতকরা এক ভাগ নিহত হয়েছেন।
এ নিয়ে সামরিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। তারা এই যুদ্ধে বিভিন্ন রকম বোমা ব্যবহারের কথা বলেছেন। বলেছেন, ইসরাইল ১০০ পাউন্ডের কিছু বোমা ব্যবহার করেছে। অন্যগুলো ২০০০ পাউন্ড পর্যন্ত। এর ফলে গাজায় নিহতের সংখ্যা ভয়াবহ। পেন্টাগনের সাবেক সিনিয়র গোয়েন্দা বিশ্লেষক ও জাতিসংঘের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক সাবেক তদন্তকারী মার্ক গারলাসকো বলেন, বিশাল আকারের বোমা ব্যবহার করলে পৃথিবীতে মুহূর্তের মধ্যে যে শকওয়েভ সৃষ্টি করে তা মাটিকে গলিয়ে ফেলতে পারে।
গাজা একটি অত্যন্ত জনবহুল ভূখণ্ড। দৈর্ঘ্য ৪১ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১০ কিলোমিটার। যুদ্ধ শুরুর আগে সেখানে গড়ে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বসবাস করছিলেন কমপক্ষে ৫৭০০ মানুষ। লন্ডনে গড় জনঘনত্বের খুব কাছাকাছি এই সংখ্যা। হামাসের রকেট হামলার পরই গাজায় সামরিক হামলা শুরু করে ইসরাইল। কিন্তু এই যুদ্ধ এখন তিন মাস ধরে চলছে। এতে যে পরিমাণ সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে শিশু ও নারী মারা যাচ্ছেন, তাতে ইসরাইলের ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যেসব যুদ্ধ হয়েছে তাতে বেসামরিক লোকজন নিহতের গড় হার শতকরা ৯০ ভাগ। এসব যুদ্ধে জনবহুল এলাকায় ব্যবহার করা হয়েছে বিস্ফোরক অস্ত্র। এ তথ্য অ্যাকশন অন আর্মড ভায়োলেন্সের।
যুক্তরাষ্ট্রের যেসব গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করেছে তা দেখেছে সিএনএন। তাতে বলা হয়েছে, এই যুদ্ধে গাজার ওপর কমপক্ষে ২৯০০০ বোমা ফেলেছে ইসরাইল। এর মধ্যে শতকরা ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ বোমা ‘আনগাইডেড’। আনগাইডেড বলতে বোঝায় এসব বোমা ৩০ মিটারের মধ্যে তার টার্গেট মিস করতে পারে। গারলাসকো বলেন, হামাসের সদর দফতর এবং জনবহুল এলাকায় হামলার মধ্যে এটাই পার্থক্য। তবে জনবহুল এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর মতো পূর্ব সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে বলে দাবি করে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)। এর অধীনে তারা হামলার আগে সতর্ক করে বলে জানায়। ইসরাইলের দাবি অন্য আন্তর্জাতিক যুদ্ধের চেয়ে গাজায় তারা যেসব বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করছে তুলনামূলকভাবে তার রেকর্ড ভাল। আইডিএফ বলছে, যখন আমরা দেখি অস্বাভাবিক বেসামরিক লোকজনের উপস্থিত তখন হামলা চালানো এড়িয়ে যাই। প্রতিটি টার্গেটে আমরা সঠিক অস্ত্র ব্যবহার করি। এতে অপ্রয়োজনীয় কোনো ক্ষতি করে না।
সূত্র: বিবিসি