ম্যাথিউ মিলার
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন যেনো জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয় সে লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা ও মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রধান মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
সোমবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি একতরফা নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপ আহ্বান প্রত্যাখান প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে দেশটির অবস্থান নিয়ে এই মন্তব্য করেন মিলার।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই মুখপাত্র জানান, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাবে এবং একইসঙ্গে আহবান জানাবে তারা যেনো জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করে।
নির্বাচন ছাড়াও বাংলাদেশে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলন এবং তাতে সরকারের সহিংস পন্থায় দমন প্রসঙ্গও উত্থাপিত হয়। এসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রম নীতির কথা তুলে ধরে মিলার দেশটির শক্ত অবস্থানের কথা জানান দেন। তিনি বলেন, শ্রমিক এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলোর কার্যক্রমের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের চলমান নিপীড়নে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন।
মিলার বলেন, কোনো ধরনের সহিসংতা, প্রতিশোধপরায়ণতা এবং ভীতি প্রদর্শন ছাড়াই শ্রমিকরা যাতে স্বাধীনভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এবং মালিকপক্ষের সঙ্গে নিজেদের দাবি তুলে ধরতে পারে সেই অধিকার সরকারকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশে বেতন বৃদ্ধির বিক্ষোভে পোশাক শ্রমিক নিহত হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নতুন শ্রম নীতি প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ব্রিফ্রিংয়ে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, "পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র শ্রম অধিকার নীতি ঘোষণা করার সময় বলেছেন, যারা শ্রম অধিকার লঙ্ঘন করবে, যারা শ্রমিকদের হুমকি এবং ভীতি প্রদর্শন করবে প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশের শ্রমিক নেতা কল্পনা আক্তারের সংগ্রামের দিকটি উল্লেখ করেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশে বেতন বাড়ানোর দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনে ৫জন নিহত হয়েছে। এমন ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র কী কোন ধরনের পদক্ষেপ নিবে?"
জবাবে মিলার বলেন, "গত সপ্তাহে দেয়া বক্তৃতায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে বুঝা যায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রম অধিকারের সুরক্ষা এবং প্রসারে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বিশ্বজুড়ে সরকার, শ্রমিক, শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, সুশীল সমাজ এবং প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত রেখেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় যুক্তরাষ্ট্র তার এই তৎপরতা অব্যাহত রাখবে। প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমি আপনাকে আবারও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পুরো বিবৃতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করবো।"
বাংলাদেশে শ্রমিকদের বিক্ষোভে প্রাণহানি এবং সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে এই মুখপাত্র আরও বলেন, "বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে নূন্যতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে সহিসংতা, শ্রমিক এবং ট্রেড ইউনিয়নের বৈধ কার্যক্রমকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার বিষয়গুলোতে আমরা নিন্দা জানাচ্ছি। বাংলাদেশে শ্রমিক এবং ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনগুলোর ওপর চলমান নিপীড়নেও উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এক্ষেত্রে আমাদের মূলনীতি হল, যেমনটা এর আগেও বলেছি -- কোনো ধরনের সহিসংতা, প্রতিশোধপরায়ণতা এবং ভীতি প্রদর্শন ছাড়াই শ্রমিকরা যাতে স্বাধীনভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এবং মালিকপক্ষের সঙ্গে নিজেদের দাবি তুলে ধরতে পারে সেই অধিকার সরকারকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।"
বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব জায়গায় এই মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে উল্লেখ করেন মিলার।
ব্রিফিংয়ে আগামী নির্বাচন ইস্যুতে বাংলাদেশে চলমান সংকট এবং বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারি বাহিনীর নিপীড়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এই প্রতিবেদক জানতে চান, "বিরোধীদলের ওপর আক্রমণ, এর মধ্যে রয়েছে হত্যা, গণগ্রেফতার এবং বিরোধীদলের কর্মী এবং পরিবারের সদস্যদের অপহরণ, অব্যাহত রেখেই আরেকটি একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। ক্ষমতাসীন দল আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপের আহ্বানকে প্রত্যাখান করেছে। যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু বাংলাদেশে এক দলের ওপর অন্য দলকে প্রাধান্য দেয়না, সেক্ষেত্রে এই একদলের কতৃর্ত্ববাদী শাসনের অবসানে আপনারা কী ধরনের পদক্ষেপের কথা ভাবছেন?"
জবাবে মিলার বলেন, "আপনি ঠিক বলেছেন। আমরা এক দলের ওপর অন্য দলকে প্রাধান্য দেইনা। বাংলাদেশের জনগণ যেমন চায় শান্তিপূর্ণ উপায়ে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হোক আমরাও তেমনটাই চাই।"
তিনি বলেন, "সরকার, বিরোধীদল, সুশীল সমাজ এবং অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা অব্যাহত থাকবে। এই লক্ষ্য অর্জনে তাদেরকে আহবান জানাবো তারা যেনো বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণে একসঙ্গে কাজ করে, যাতে করে শান্তিপূর্ণভাবে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান হতে পারে।" বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলেও মন্তব্য করেন এই মুখপাত্র।