ছবি:সংগৃহীত
ভারতের উত্তরপ্রদেশের সামভালে মুঘল আমলের একটি জামে মসজিদকে ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। মসজিদটি যেখানে তৈরি করা হয়েছে সেখানে আগে মন্দির ছিল এমন দাবি করে আদালতের দারস্থ হয়েছিলেন হিন্দুত্ববাদী বেশ কয়েকজন ব্যক্তি। এরপর আদালত তাদের পিটিশনের ভিত্তিতে সেখানে জরিপ চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
রোববার সকালে জরিপ চালাতে গিয়েছিল একটি দল। কিন্তু তাদের জরিপ চালাতে বাধা দেন সেখানকার মুসল্লিরা। তারা পুলিশ ও জরিপকারী দলের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এরপর তাদের ওপর গুলি চালিয়ে নাঈম, বিলাল এবং নোমান নামের তিন মুসলিমকে হত্যা করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, একজন ‘অ্যাডভোকেট কমিশনার’-এর নেতৃত্বে রোববার সকালে মসজিদটিতে গিয়েছিল জরিপকারী দল। ওই সময় সেখানে প্রায় ১ হাজার মানুষ জড়ো হন। তাদের মধ্যে কয়েকজন পুলিশ ও জরিপকারী দলের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। ওই সময় উপস্থিত জনতা ১০টি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। পুলিশ তখন টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে উপস্থিত মুসলিম জনতাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
পুলিশ ব্যাপক শক্তি প্রয়োগের ফলে সেখানে তিন মুসলিমের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া পুলিশের সুপারিনটেনডেন্টের গানারসহ ৩০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মোরাদাবাদ ডিভিশনাল কমিশনার অঞ্জনেয়া কুমার সিং।
যেসব হিন্দুত্ববাদী ব্যক্তি মসজিদের জায়গায় মন্দির থাকার দাবি করেছেন, তারা আদালতের পিটিশনে বলেছেন, মুঘল শাসক বাবরের আমলে ১৫২৯ সালে মন্দির ভেঙে সেখানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল।
সমালোচকরা বলেছেন, মূলত উত্তেজনা তৈরি করতেই মসজিদটিতে জরিপ চালানোর মতো নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এ ছাড়া এর মাধ্যমে ভারতের উপাসনা আইন ১৯৯১ ভঙ্গ করা হয়েছে। এ আইনে ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর পবিত্রতা রক্ষার কথা বলা হয়েছে।
তিন মুসলিমকে হত্যার পাশপাশি নারীসহ আরও অন্তত ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, যারাই আজকের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের সবাইকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
প্রায় ৫০ জন আহত ও তিনজকে হত্যার পরও মসজিদটিতে জরিপ চালিয়েছে জরিপকারী দল। তারা আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মসজিদটির বিভিন্ন জায়গার ছবি ও ভিডিও ধারণ করে নিয়ে গেছেন। আগামী ২৯ নভেম্বরের মধ্যে আদালতের কাছে জরিপের প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
স্থানীয় রাজনীতিবিদরা বলেছেন, নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে সেখানে উত্তেজনা তৈরি করেছে। তারা মূলত সেখানে রাজনৈতিক ফায়দা আদায় করে নিতে এ কাজ করেছে।