ছবি:সংগৃহীত
লেবাননের সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগঠন হিজবুল্লাহ কামিকাজে ড্রোনের একটি স্কোয়াড্রন দিয়ে ইসরায়েলের তেল আবিব শহরের উপকণ্ঠে প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে। ইহুদিদের পবিত্রতম দিন ইয়োম কিপপুরে শুক্রবার এ হামলায় ইসরায়েল প্রকম্পিত হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় ৩২০ রকেট হামলার জেরে প্রায় ৩ হাজার ইসরায়েলি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। খবর সিএনএন, টাইমস অব ইসরায়েল, আলজাজিরা ও প্রেস টিভির।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ৩২০টি রকেট হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছে। শনিবার হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা ইসরায়েলে রকেট নিক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে।
ইয়োম কিপপুরে চিকিৎসা নেওয়া ইসরায়েলিদের মধ্যে হিজবুল্লাহর বিস্ফোরণে সরাসরি আহত ব্যক্তিরাও রয়েছে। ইয়োম কিপপুর উপলক্ষে উপবাস ও পানি স্বল্পতার কারণে বেশির ভাগ লোক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল বলে দাবি ইসরায়েলি পত্রিকা টাইমস অব ইসরায়েলের।
এদিকে এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, লেবাননে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ভয়ংকর নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। ৫০ বছরের মধ্যে ইসরায়েল দক্ষিণ লেবাননে চতুর্থবারের মতো স্থল হামলা চালাচ্ছে। তবে দেশটির সৈন্যরা আবারও বিস্ফোরক পুঁতে রাখা পাথুরে ভূখণ্ডের মুখোমুখি হয়েছে।
লেবাননে আগ্রাসনে অংশগ্রহণকারী এবং ২০০৯-২০১৩ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের সঙ্গে ইসরায়েলি লিয়াজোঁ অফিসার হিসেবে কাজ করা জোনাথন কনরিকাস বলেন, লেবানন ভূখণ্ডটি ব্যাপকভাবে আলাদা। ওয়াশিংটনের রক্ষণশীল ঘরানার ‘ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসিসের’ জন্য কাজ করা সাবেক সামরিক মুখপাত্র কনরিকাস এএফপিকে বলেন, ‘এ ভূখণ্ড হানাদার বাহিনীর জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং এবং হিজবুল্লাহর মতো শত্রুর জন্য সুবিধাজনক।’
এদিকে ইরানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য দেশটিতে প্রথমবারের মতো মার্কিন সৈন্য পাঠানোর কথা বিবেচনা করছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। অনেকে মনে করছেন, বর্তমানে ইরানে হামলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ইসরায়েল।
রোববার ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফ জানায়, পেন্টাগন ইসরায়েলে একটি ‘টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স’ (থাড) ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারি মোতায়েন করার বিষয়ে আলোচনা করেছে বলে জানা গেছে। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকাতে এটি ব্যবহার করা হতে পারে। মার্কিন সামরিক বাহিনী এটি পরিচালনা করবে।
গত ১ অক্টোবর ইসরায়েলে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এর পর ইসরায়েলও পাল্টা হামলা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে ইসরায়েল প্রতিশোধমূলক হামলা চালালে ইরানও প্রত্যাঘাত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য ইসরায়েলে সেনা মোতায়েন করা হলে ওয়াশিংটন তাদের সেনাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। তিনি এক্স পোস্টে লিখেছেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলছি, আমাদের জনগণ এবং স্বার্থ রক্ষায় আমাদের কোনো লাল রেখা নেই।’
তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরায়েল হামলা চালালেও ইরানের পরমাণু স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করবে এমন কোনো ইঙ্গিত তাদের কাছে নেই। মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করেন, ইসরায়েল ইরানের যেসব সামরিক ও জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা করতে চায়, তা সংকুচিত করে এনেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে এনবিসি বলেছে, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করবে বা আরও হত্যাকাণ্ড চালাবে– এমন কোনো ইঙ্গিত নেই। ইরান হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ইসরায়েল হামলা চালালে তেহরানও কঠোর জবাব দেবে।
এদিকে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৪২ হাজার ২২৭ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৯৮ হাজার ৪৬৪ জনকেআহত হয়েছে। রোববার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫২ জন নিহত এবং ১২৮ জন আহত হয়েছে। তবে ফিলিস্তিনজুড়ে বিশাল ধ্বংসস্তূপে হাজার হাজার লাশ চাপা থাকায় গাজায় ইসরায়েলের বছরব্যাপী আগ্রাসনে মৃতের সংখ্যা সম্ভবত অনেক বেশি হবে বলে জানায় আলজাজিরা
সূত্র:সিএনএন, টাইমস অব ইসরায়েল, আলজাজিরা