Banglar Chokh | বাংলার চোখ

১০ বছরের মধ্যে প্রথম নির্বাচন হচ্ছে জম্মু-কাশ্মীরে

আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৩:২৩, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ

১০ বছরের মধ্যে প্রথম নির্বাচন হচ্ছে জম্মু-কাশ্মীরে

ছবি:সংগৃহীত

১০ বছরের মধ্যে প্রথম নির্বাচন হচ্ছে জম্মু-কাশ্মীরে। তবে এবার হচ্ছে কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত রাজ্য হিসেবে বিধানসভা নির্বাচন। সাবেক জম্মু-কাশ্মীর এখন দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত। তিন দফায় সেখানে নির্বাচন হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম দফা ও দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ শেষ। আগামী মঙ্গলবার তৃতীয় দফা এবং শেষ দফা ভোট গ্রহণ করা হবে। ৮ই অক্টোবর ফল ঘোষণার কথা রয়েছে। ১৯৯০-এর দশক থেকে সেখানে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয় ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে। তাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে আছেন বেসামরিক এবং নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। এর আগের নির্বাচনগুলোতে সহিংসতা হয়েছে। নির্বাচন বর্জন করেছে বিদ্রোহীরা। এর ফলে ওই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে সচেষ্ট হয় দিল্লি। এরপর সেখানে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি অনেক বেশি। ফলে ধারণা করা হচ্ছে জনগণ শেষ পর্যন্ত তাদের রায় জানাতে সক্ষম হচ্ছেন। এ খবর দিয়ে অনলাইন বিবিসি বলছে, এরই মধ্যে ভোট দিয়েছেন মোহাম্মদ ইউসুফ গণি (৫২)। তিনি বলেন, তাদের ওই এলাকায় দারিদ্র্য খুব প্রকট। শিক্ষিত কাশ্মীরি যুবকদেরকে চাকরির অভাবে ঘরে অলস বসে থাকতে হয় বলে কড়া সমালোচনা করেন তিনি। এর আগের নির্বাচনে সেখানে একটি জোট সরকার গঠিত হয়েছিল। সেই সরকার ভেঙে যায় ২০১৮ সালে। তারপর নতুন নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকার সেখানকার স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে। তাতে কাশ্মীরিদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। তারপর থেকে ৫ বছর ধরে জম্মু ও কাশ্মীর আছে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের অধীনে। সেখানে কোনো স্থানীয় প্রতিনিধি নেই। ফলে এই নির্বাচনে নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নেয়ার দীর্ঘ প্রতীক্ষা পূরণ হবে তাদের। মোহাম্মদ আবদুল দার (৬৫)। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচিত কর্মকর্তার কাছে আমাদের সমস্যা নিয়ে যেতে পারবো। 

প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে উরি শহর। নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে শেষ শহর। সেখানে আওয়ামী ইত্তেহাদ পার্টির (এআইপি) নির্বাচিত এমপি ইঞ্জিনিয়ার রশিদ বিক্ষুব্ধ জনতার মাঝে বক্তব্য রাখছিলেন। সন্ত্রাসে অর্থায়নের অভিযোগে ২০১৯ সাল থেকে তিনি জেলে ছিলেন। এবার নির্বাচনী প্রচারণার জন্য অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছেন তিনি। তাকে দেখে লোকজন ছুটে যান। তার সঙ্গে সেলফি তোলেন। কেউবা তাকে একটি জ্যাকেট প্রস্তাব করেন। কারণ, ভোটারদের খুব কাছাকাছি তিনি। রশিদ বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরের উন্নয়ন এবং এ বিষয়ক সমস্যার সমাধান করতে চাই। এখন যদি এমপি হতে পারেন, তাহলে এসব সমস্যা দিল্লির সামনে তুলে ধরতে পারবেন। তার বক্তব্য খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার তানভীর চলকু (২৯)। তিনি বলেন, স্বায়ত্তশাসন বাতিল করাটা ছিল সবচেয়ে অন্যায় কাজ। জনগণকে গত ১০টি বছর তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। 

তবে বিজেপি সরকারের দাবি জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বা স্বায়ত্তশাসন বাতিল করা এবং তা কেন্দ্রীয় শাসনের সরাসরি অধীনে আনার ফলে শান্তি ও উন্নয়ন এসেছে। গত মার্চে সেখানে সফরে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি এ সময় সেখানকার বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ৭০ কোটি ডলার ঘোষণা করেন। শ্রীনগরের লাল চক থেকে বিজেপির হয়ে প্রার্থী হয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার এজাজ হোসেন। তিনি বলেন, এর আগে কেউ প্রচারণায় ভোটারের দরজা থেকে দরজায় ছুটতেন না। কিন্তু এখন যাচ্ছেন। এটাই আমাদের অর্জন। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতিকে ভোটারদের আস্থা বৃদ্ধির প্রমাণ বলে মনে করেন তিনি। এর আগে বিজেপি এখানে নির্বাচন করেনি। তবে কাশ্মীর উপত্যকায় বিধানসভার আসন সংখ্যা ৪৭। তার মধ্যে মাত্র ১৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তারা। দলটির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে জম্মুকে মনে করা হচ্ছে। এখানকার বিধানসভার আসন ৪৩টি। এটি হিন্দু অধ্যুষিত। ফলে বিজেপি সেখানে ভাল করবে বলে মনে করা হচ্ছে। এজাজ হোসেন স্বীকার করেন, অন্য আসনগুলোতে আমাদের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল। কিন্তু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর উপত্যকায় উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি। 

এজাজ হোসেন বিজেপির পতাকাশোভিত প্রায় ৫০টি গাড়িবহর নিয়ে শ্রীনগরের সংকীর্ণ রাস্তাগুলোতে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এর মাধ্যমে তারা কাশ্মীরে শক্তি প্রদর্শন করছেন। কয়েক বছর আগেও এমন চিত্র ছিল অকল্পনীয়। কেউ কেউ ঘর থেকে মিষ্টি এনে এজাজ হোসেনকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। অন্যরা বিরত থাকছেন। কিন্তু কাশ্মীরের বেশির ভাগ মানুষই বিজেপিকে দেখে এমন একটি দল হিসেবে, যারা তাদের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নিয়েছে। এমন ঘটনায় হতাশাগ্রস্ত মালেহা সোফি (২৪)। তিনি ভোট না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদেরকে কিছুই বলতে দেয়া হয়নি। পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) মতো দলগুলো তাদের প্রচারণার কেন্দ্রে এ বিষয়টি নিয়ে এসেছে। পুলওয়ামা থেকে এ দলের প্রার্থী হয়েছেন ওয়াহিদ পারা। তিনি বলেন, এই নির্বাচন হলো কাশ্মীরিদের কাছে আত্মরক্ষার মতো একটি বিষয়। এটা এমন একটি পদক্ষেপ যার মাধ্যমে আমরা কি হারিয়েছি তা দাবি করা এবং যা আছে তা সংরক্ষণের সুযোগ এসেছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি বিদ্রোহী গ্রুপকে সহায়তা করার অভিযোগে ২০২০ সাল থেকে প্রায় দুই বছর জেল খেটেছেন ওয়াহিদ পারা। কাশ্মীরে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের দীর্ঘ অভিযোগ আছে ভারতের বিরুদ্ধে। কিন্তু ভারত তা অস্বীকার করে। কিন্তু সমালোচকরা বলেন, এই অধিকার লঙ্ঘন গত কয়েক বছরে তীব্র হয়েছে। 
বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করে, ভারত সরকার সেখানে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করছে। জম্মু ও কাশ্মীরে ভিন্ন মতাবলম্বীদের মুখ বন্ধ করতে সন্ত্রাস বিরোধী আইন ব্যবহার করে খেয়ালখুশিমতো আটক বন্ধ করার আহ্বান জানায় তারা। কিন্তু এ বিষয়ে সবসময়ই কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিজেপি সরকার। এজাজ হোসেন বলেন, যারা বিদ্রোহী তাদের বিষয়ে সিরিয়াসলি দেখা উচিত।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়