ফাইল ছবি
ফেসবুকে ভারতবিরোধী স্ট্যাটাস দিয়ে ছাত্রলীগের হাতে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ প্রকৌশলী বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
মেধাবী এই শিক্ষার্থীর নামে বুয়েটের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির নামকরণের প্রস্তাব করেছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে তাদের প্রস্তাব নাকচ দিয়েছে বুয়েট প্রশাসন। এ ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছে আবরারের পরিবার।
শনিবার আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আববার ফাইয়াজ নিজের ফেসবুক ওয়ালে এ বিষয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তার স্ট্যাটাসটি হুবহু পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
“বুয়েট প্রশাসনের আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রায় ৫ বছর হয়ে গেছে।
৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রাফিতিসহ বিভিন্নভাবে আবরার ফাহাদসহ ফ্যাসিস্টদের হাতে সব শহিদের স্মৃতি সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কিন্তু যেখানে আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হয়েছে, সেই বুয়েটেই গত পাঁচ বছরে তার স্মৃতি রক্ষার্থে ঠিক কী করা হয়েছে?
বুয়েটে আসার পর এ ব্যাপার প্রথম উদ্যোগ নিতে দেখি ১৮ ব্যাচের ভাইয়াদের। তারা একটি বিল্ডিংয়ের নাম আবরার ফাহাদের নামে করার জন্য চেষ্টা শুরু করেন। সর্বশেষ প্রস্তাব দেওয়া হয়, বুয়েট সেন্ট্রাল লাইব্রেরির নাম আবরার ফাহাদের নামে করার জন্য। এজন্য শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে আগের প্রশাসনকে দেওয়া হয়। কিন্তু তখন পুনরায় বিস্তারিত তথ্যসহ সাইন নেওয়া ও বিভিন্ন আন্দোলনের কারণে কালক্ষেপণ করে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। কিন্তু তৎকালীন প্রশাসন এ বিষয়ে নেতিবাচক কোনো মনোভাব প্রকাশ করেনি।
৫ আগস্টের পর সারা দেশের মতো বুয়েটের প্রশাসনেও পরিবর্তন আসে। নতুন ভিসি-প্রোভিসিদের সঙ্গে প্রথম মিটিংয়েই বর্তমান শিক্ষার্থীরা ৭ অক্টোবরের পূর্বেই কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির নাম আবরার ফাহাদের নামে করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু বুয়েট প্রশাসন সরাসরি জানিয়ে দেয়, ‘কোনো শহিদের নামে কোনো ভবনের নামকরণ করা যাবে না, কারণ পরবর্তীতে অন্য সরকার এসে নাম পরিবর্তন করে দিতে পারে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে বুয়েটের শহিদ শিক্ষার্থীদের পরিবার এসেও একই রকম দাবি জানাতে পারে। তাই আবরার ফাহাদের নামে লাইব্রেরির নাম করা যাবে না। তবে হলে স্মৃতিফলক করার ক্ষেত্রে উনাদের আপত্তি নেই।’
উল্লেখ্য যে, ২০০২ সালে ছাত্রদলের দুপক্ষের গোলাগুলিতে নিহত হওয়া সাবেকুন নাহার সনি আপুর নামে বুয়েটের ছাত্রী হলের নামকরণ করা হয়েছে।
যদিও আমি এ ব্যাপারে সরাসরি জড়িত নই, কিন্তু যেখানে আওয়ামী লীগ সরকারই আবরার ফাহাদ নিয়ে কোনো বিতর্ক করেনি, সেখানে এতকিছুর পর অন্য সরকার এসে নাম পরিবর্তন করবে বুয়েট প্রশাসনের এমন যুক্তি দেওয়াটা রীতিমতো হতাশাজনক”।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পানি ও গ্যাস চুক্তির বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন আবরার।
ওই দিনই শেরেবাংলা হলের গেস্টরুমে আসামিরা সভা করে বুয়েটের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র আবরারকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়।
স্ট্যাটাসটি দেওয়ার সময় তিনি কুষ্টিয়ায় গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। পর দিন (৬ অক্টোবর) বিকালে তিনি বাড়ি থেকে বুয়েটের হলে ফেরেন।
হলে ফেরার কয়েক ঘণ্টার মাথায় রাত ৮টার দিকে আবরারসহ দ্বিতীয় বর্ষের সাত-আটজন ছাত্রকে শেরেবাংলা হলের দোতলার ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে পাঠান তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাত-আটজন নেতা।
তারা আবরার ফাহাদের মোবাইল নিয়ে ফেসবুক ও মেসেঞ্জার ঘেঁটে দেখেন। এ সময় আবরার শিবিরের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ আনা হয়। আবরার এসব অস্বীকার করলে শুরু হয় স্টাম্প দিয়ে আবরারকে পেটাতে শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আরও কয়েকজন নেতাকর্মী আসেন। তারা আরেক দফা পেটান আবরারকে।
মার খেয়ে একপর্যায়ে আবরার অচেতন হয়ে পড়লে কোলে করে মুন্নার কক্ষে (২০০৫ নং) নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার আরও অবনতি হলে দোতলা ও নিচতলার সিঁড়ির মধ্যবর্তী জায়গায় অচেতন আবরারকে নিয়ে যান তারা। অচেতন আবরারের চিকিৎসার জন্য হল প্রভোস্ট ও চিকিৎসককে খবর দেয় ছাত্রলীগের সেসব কর্মী। কিন্তু এরই মধ্যে প্রাণ হারান আবরার।
চিকিৎসক এসে আবরারকে মৃত ঘোষণা করেন। তখন কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেয়।
আবরার হত্যার ঘটনায় তার বাবা মো. বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় মামলা করেন।
২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে ২০ জনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। এছাড়া এ মামলার অপর পাঁচ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।