Banglar Chokh | বাংলার চোখ

কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সড়ক অবরোধ

শিক্ষা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ২ জুলাই ২০২৪

সর্বশেষ

কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সড়ক অবরোধ

ছবি:সংগৃহীত

কোটাবিরোধী আন্দোলনে ফের সরব হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। আদালতের রায়ে ফিরে আসা কোটা বাতিলের দাবিতে গতকাল দেশব্যাপী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের ৩০শে জুন পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন। সেই সময় শেষ হওয়ায় গতকাল আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। কোটা বাতিলের দাবিতে মহাসড়ক-সড়ক অবরোধ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আগামীকাল ৩রা ও ৪ঠা জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ৭ কলেজ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ঢাকার সব কলেজে একযোগে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। 

কোটা বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা গতকাল ৪টি দাবি জানান। ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে, ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না ও কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করে দেয়া প্রজ্ঞাপন হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণার প্রতিবাদে ও প্রজ্ঞাপন পুনর্বহালের দাবিতে গতকাল বড় ধরনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
 
‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে কলাভবন, শ্যাডো, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ হয়ে হলপাড়া দিয়ে হাজী মুহম্মদ মুহসিন হলের সামনে দিয়ে ভিসি চত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ করে তারা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘কোটা না মেধা-মেধা মেধা’, আপস না সংগ্রাম-সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘আঠারোর পরিপত্র পুনর্বহাল করতে হবে’, ‘কোটাপ্রথা নিপাত যাক-মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘সারা বাংলায় খবর দে-কোটাপ্রথার কবর দে’, ‘আমার সোনার বাংলায়-বৈষম্যের ঠাঁই নাই’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, পোষ্যকোটা চালু করা হয়েছে। এটা কাদের পক্ষে? যারা এরই মধ্যে একটা সরকারি চাকরি করে তাদের ছেলেমেয়েদের পক্ষে। আর কাদের বিরুদ্ধে? যে কৃষক পরিবারের সন্তান, যেই কৃষক হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে তার সন্তানকে পড়াশোনা করায় তার বিরুদ্ধে। জেলে, মজুর, কৃষক, রিকশাওয়ালা যে ভাইবোন রয়েছে তাদের সন্তানেরা যারা পড়াশোনা করছে তাদের বিরুদ্ধে। তাই আমাদের দাবি হচ্ছে, ১৮ সালের পরিপত্রটি সবার আগে বহাল করতে হবে।


সমাবেশ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমানের কাছে যান শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা প্রক্টরের কাছে সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি খোলা রাখা এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হল, ক্যান্টিন খোলা রাখাসহ সব শিক্ষার্থীর সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানান। পরে শিক্ষার্থীরা আজ (মঙ্গলবার) দুপুর আড়াইটায় গণ-পদযাত্রা কর্মসূচির ঘোষণা করেন। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি): ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকুরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখাসহ ৪ দাবিতে ছাত্র সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে এ ছাত্র সমাবেশ করেন তারা। তাদের দাবিগুলো হলো- ২০১৮ এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকুরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে, সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে, দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বলেন, আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ৪ঠা জুলাই দিন ধার্য করা হয়েছে। আদালতের এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আমাদের এই আন্দোলন। সংবিধানে স্পষ্ট লেখা আছে শুধুমাত্র পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর জন্যই কোটা থাকবে। কিন্তু এই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী কি সকল সাধারণ মুক্তিযোদ্ধার নাতি? নাকি মুক্তিযোদ্ধার ছেলে? ২০১৮ সালে আমরা দেখেছিলাম তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে কোটা বাতিলের পর সম্প্রতি হাইকোর্ট এটিকে অবৈধ ঘোষণা করেন। তাই আমাদের অবস্থান আগের মতোই। কোটা পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা করতে হবে।

আগামী ৪ঠা জুলাই কোটা পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা না করা হলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করা হবে হুঁশিয়ারি দেন তারা। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়। এরপর ১০ মিনিট ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক প্রতীকী অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ডেইরি ফার্ম থেকে সিএন্ডবি পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি): বৃষ্টি উপেক্ষা করেই কোটা বিরোধী আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বৃষ্টিতে ভিজেই এই সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘সারা বাংলা খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘মেধা না কোটা? মেধা-মেধা’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। 
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) : ‘অযৌক্তিক’ কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও ছাত্র সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে  ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’র ব্যানারে ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে ৪ দফা দাবি জানানো হয়। গতকাল বেলা ১১টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ক্যাম্পাসে প্রথমে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন। পরবর্তীতে মিছিলটি রায়সাহেব বাজার মোড় হয়ে বাহাদুর শাহ পার্ক প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসে ফিরে আসে। এ সময় শিক্ষার্থীরা দাবির পক্ষো নানা স্লোগান দেন। 
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) : চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে গতকাল বিকাল ৩টায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল মিডিয়া চত্বরে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্কের মোড় সংলগ্ন ১নং গেটের সামনে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।  বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) প্রতিনিধি জানান, কোটা পুনর্বহাল নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে সকাল ১১টায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। 

এ সময় নানা স্লোগান দেন। হাতে দেখা যায় নানা প্ল্যাকার্ড। এ সময় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী তারিক হোসেন বলেন, সংবিধানের ২৯নং অনুচ্ছেদে সুষ্পষ্টভাবে বলা হয়েছে ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের ক্ষেত্রে সুযোগের সমতা থাকবে।’ সেক্ষেত্রে কোটা সুষ্পষ্টভাবে সংবিধানের লঙ্ঘন এবং মানবাধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমরা অবিলম্বে হাইকোর্ট কর্তৃক দেয়া অযৌক্তিক রায় বাতিলের দাবি করছি

সর্বশেষ

জনপ্রিয়