ফাইল ছবি
নিখোঁজ পাবনার বেড়া উপজেলার জিয়াউর রহমান (৪৭) নামের এক ব্যক্তি পুলিশের ধাওয়ায় নিখোঁজের ছয়দিন পর ‘কঙ্কাল’ পাওয়া নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। নিহতের পরিবারের দাবি কঙ্কালটি জিয়াউরের। অপরদিকে পুলিশ বলছে, ডিএনএ রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত তিনি সত্যিই জিয়াউর রহমান কি না সে সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য উদ্ধার করা কঙ্কাল থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মামলার জন্য অপেক্ষা করতে হবে বলে নিহতের পরিবারকে জানিয়েছে পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) কঙ্কালটির ময়নাতদন্ত শেষে ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করার পর পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হলে ওই দিনই স্বজনেরা স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করে।নিহত জিয়াউরের স্ত্রী রহিমা খাতুনসহ স্বজনেরা জানান, কিছুদিন আগে জিয়াউর তাঁর নিজের পুরোনো এক্সকাভেটর মেশিন(ভেকু)বিক্রি করে। বিক্রির টাকা থেকে আট/নয় লাখ টাকা নিয়ে সে ২১ সেপ্টেম্বর সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে উপজেলার যমুনার চরে অবস্থিত চরসাফুল্লাপুর গ্রামের জয়বাংলা বাজারের কাছে জুয়ার আসরে যায়। এরপর ওইদিন বিকেল চারটার দিকে বেড়া থানা পুলিশ ধাওয়া দিলে জিয়াউরসহ জুয়াড়িরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে পালিয়ে যায়। তাদের মধ্যে কেউ গ্রামের দিকে যায়,আবার কেউ খালে ঝাঁপ দেয়। পরে পুলিশ চলে গেলে অন্যান্য জুয়াড়িরা গ্রাম থেকে বের হয়ে এলেও জিয়াউর আর ফেরেনি। মাত্র ছয়দিনে মানুষ কীভাবে কঙ্কাল হয়- তা নিয়ে আমাদেরও প্রশ্ন আছে? তবে কঙ্কালের পাশে পড়নের লুঙ্গি ও গেঞ্জি দেখে আমরা নিশ্চিত ওটা জিয়াউরেরই। উদ্ধার করা গেঞ্জির পকেটে ১৯ হাজার ১০০ টাকাও পেয়েছি। জিয়াউর বলে নিশ্চিত হয়েই কবরস্থানে কঙ্কালটিকে আমরা দাফন করেছি। জিয়াউরের হত্যার পেছনে জুয়ার আয়োজকদের হাত রয়েছে বলে তারা দাবি করে জানান, টাকার জন্যই জুয়ার আয়োজকেরা গ্রামের কোনো গোপন জায়গায় জিয়াউরকে নিয়ে হত্যা করে এবং হত্যাকারীরা এসিড বা কোনো রাসায়নিক ব্যবহার করে জিয়াউরের লাশ কঙ্কালে পরিণত করেছে। এ ঘটনায় এলাকার স্থানীয়রা জানান,বেড়া থানাধীন নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের ০৮ নং ওয়ার্ডের চরসাফুল্লাহপুর গ্রামের জয়বাংলা বাজারে প্রভাবশালী আমজাদ মোল্লার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন জুয়ার আসর বসতো। এখানে উপজেলার নগরবাড়ি, রাকসা,বেড়া,ঢালারচর,আমিনপুর,সুজানগর, দূরদূরান্তের জুয়ারিরা জুয়া খেলতে আসতো। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার খেলা চলতো সেখানে। পুলিশকে ম্যানেজ করার কথা বলে জুয়ার আসর থেকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা তুলতেন এলাকার প্রভাবশালী আমজাদ মোল্লা। জিয়াউরের চাচা আজম কাজী বলেন, বেড়া থানায় মামলার জন্য যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু আমাদেরকে ডিএনএ রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। কঙ্কাল থেকে নমুনা রাখা হয়েছে। এখন জিয়াউরের সন্তান অথবা ভাইকে নমুনা দেওয়ার জন্য নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যেই আমরা ওদের নিয়ে গিয়ে নমুনা দিয়ে আসবো। বেড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হাদিউল ইসলাম বলেন, কঙ্কালটি জিয়াউরের কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ পরীক্ষার বিকল্প নেই। তাই ডিএনএ রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত আপাতত মামলা নেওয়া যাচ্ছে না। তবে এ ব্যাপারে তদন্ত অব্যাহত আছে ও থাকবে। ওই এলাকাসহ আমার থানায় জুয়া বন্ধের জন্য আমরা কঠোরভাবে কাজ করছি।
উল্লেখ্য, পুলিশ আসার খবর পেয়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর জুয়ার আসর থেকে অন্যান্য জুয়াড়ির সঙ্গে বেড়া উপজেলার ঢালারচর ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামের জিয়াউর রহমান দৌড়ে পালিয়ে যায়। এরপর থেকে সে নিখোঁজ রয়েছে। ২৭ সেপ্টেম্বর জুয়ার আসরের পাশেই নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের চর এলাকার আগবাগশোয়া গ্রামের একটি নালা থেকে কঙ্কালটি পাওয়া গেলে সেটিকে জিয়াউরের বলে দাবি করেন স্বজনেরা।