রুইচাউ মারমা
রাঙামাটি কাউখালী থেকে অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা সদস্যকে অপহরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপহৃত অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য হলো রুইচাউ মারমা (৭৫) প্রকাশ ববির পিতা। মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের বড়ডলু এলাকা থেকে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী তাকে অপহরণ করেছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। মঙ্গলবার অপহরন করা হলেও শুক্রবার বিকেলে তা জানাজানি হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, যেখান থেকে অপহরন করা হয়েছে সে এলাকা পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফ’র নিয়ন্ত্রনাধীন। ইউপিডিএফ’র সম্পৃক্ততায় এ অপহরনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে স্থানীয়দের ধারনা।
কাউখালী থানার ওসি সাইফুর রহমান সোহাগ অপহরনের ঘটনার কথা তিনিও লোক মূখে শুনেছেন বলে জানান। তবে কারা বা কি কারণে অপহরণ করা হয়েছে তা জানাতে পারেনি।
তাছাড়া পরিবারের পক্ষ থেকেও কোন অভিযোগ করা হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন। এর আগেও উক্ত এলাকায় এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এসব ঘটনায় উক্ত এলাকায় স্থানীয়দের মধ্যে আতংক দেখা দিয়েছে। অপরদিকে ইউপিডিএফ তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের বড়ডলু এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সেনা সদস্য রুইইচাউ মারমা (৭৫) প্রকাশ ববির পিতাকে ইউপিডিএফ’র চাঁদা কালেক্টর রিমনসু ওরফে টুইক্কা মারামা ও পোষ্ট পরিচালক চাইসিউ ওরফে অভি মারমার নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি দল গত ২৯ অক্টোবর ঐ সেনা সদস্যকে তার বাড়ীর সামনে থেকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
অপহরণকারীরা তাকে দূর্গম বড়ইছড়ি এলাকার দিকে নিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। তবে ভয়ে এতোদিন কেউ মুখ খোলেননি। বড়ইছড়ি এলাকাটি মূলতঃ চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ গ্রুপের শক্তিশালী ঘাটি হিসেবে পরিচিত। কাউখালীর এ এলাকাটিতে ইউপিডিএফ যুগের পর যুগ এক ধরনের আধিপত্য ধরে রেখেছে।
তবে কি কারণে সত্তরোর্ধ এ ব্যক্তিকে অপহরণ করা হয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি কোন পক্ষই। অপহৃতর পরিবারও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। অপহৃতর স্ত্রী জানান, রুইচাউ মারমা সুস্থ আছেন। খুব শীঘ্রই তাকে ছেড়ে দেয়া হবে বলে তিনি জানান। তবে মুক্তিপণের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি এ বিষয়টি এড়িয়ে যান।
কলমপতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যাজাই মারমা জানান, আজ কালের মধ্যে তাকে ছেড়ে দেয়া হতে পারে, বিভিন্ন সূত্র থেকে এমন তথ্যই পেয়েছি। তবে কি কারণে এই বৃদ্ধাকে অপহরণ করা হয়েছে সে বিষয়ে খোলাসা করতে পারেননি তিনি।
অপহৃত অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য রুইচাউ মারমা এ এলাকার সর্বজন পরিচিত একজন ব্যক্তি। তার সাথে উপজেলার পাহাড়ী বাঙ্গালী সকল সম্প্রদায়ের বেশ সখ্যতা রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বড়ডলু এলাকার এক বাসিন্দা জানান, একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য হিসেবে পাহাড়ের চলমান সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরোধী ছিলেন তিনি। এসব কারণে তাকে অপহরণ করা হয়ে থাকতে পরে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ইউপিডিএফ’র নেতা অমিয় চাকমা জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য অপহরনের সাথে তাদের দলের কোন সম্পৃক্ততা নাই। কে বা কারা ঘটনা ঘটিয়ে ইউপিডিএফ’র নামে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। তিনি ইউপিডিএফ’র বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি দাবী জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য গত ১৯ অক্টোবর উক্ত এলাকায় অংথোয়াই চিং মারমা নামক এক যুবককে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় পুরো এলাকায় স্থানীয়দের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।