.
জুলাই-আগস্টে গণহত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ সাবেক ১৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রোববার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। আদেশের বিষয়টি জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ১৭ জনের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার জন্য আবেদন করেছিলাম। আদালত সে আবেদন মঞ্জুর করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। সেই ১৭ জনের সবার নাম আমরা বলতে পারছি না নিরাপত্তাজনিত কারণে। এ ছাড়া যাতে এই আদেশ পৌঁছানোর আগে তারা পালিয়ে যেতে না পারেন। তিনি আরও বলেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান। তিনিসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়েছিলাম। আদালত আমাদের আবেদন মঞ্জুর করেছেন। আগামী ২০শে নভেম্বর তাদের উপস্থিত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আমরা জনগণের কাছে মেসেজ দিতে চাই, জুলাইয়ের ঘটনায় যে সমস্ত পুলিশ অফিসার সরাসরি যুক্ত ছিল এবং যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, শুধুমাত্র তাদের গ্রেপ্তার করা বা দেখানোর জন্য আবেদন করছি। যে সব পুলিশ কর্মকর্তা আছে যারা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল না, আর যারা ক্রাইম অ্যাগেইনস্ট হিউমিনিটির সঙ্গে যুক্ত ছিল না তাদের ভয়-ভীতির কোনো কারণ নেই। কারণ, আমরা কোনো নির্দোষ ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাইবো না। শুধুমাত্র যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাচ্ছি তাদের বিষয়ে চাইছি। ঢালাওভাবে কারও বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাওয়া হবে না। তিনি বলেন, যেসব পুলিশ কর্মকর্তা গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত ছিল তাদের নাম আমরা ধারাবাহিকভাবে সবার সামনে নিয়ে আসবো। হয়তো এখানে কিছুটা সময় লাগবে। কিন্তু কোনো দোষীকে বাদ দেয়া হবে না। অথবা কোনোভাবে প্রভাবিত হয়ে, অপরাধ করেছে এমন কোনো ব্যক্তিকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার সকল মামলার বাদী হবেন চিফ প্রসিকিউটর। আমাদের কাছে জনগণ বা ভুক্তভোগী পরিবার যেসব নিয়ে আসেন- এগুলো শুধুমাত্র তথ্য। এই তথ্যগুলোকে তদন্ত সংস্থা গ্রহণ করে, পরে পর্যালোচনা করে একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়। সেই রিপোর্ট চিফ প্রসিকিউটরের কাছে দেয়া হলে তিনি কোর্টের কাছে আবেদন করেন অ্যারেস্ট ইস্যু করার জন্য। আজকে পর্যন্ত তিনটি মিস কেস করা হয়েছে। প্রথম মিস কেসের মধ্যে শেখ হাসিনা এবং দ্বিতীয় মিস কেসে ওবায়দুল কাদেরসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা এবং তৃতীয়ত মিস কেসে পুলিশ সদস্যদের নেয়া হয়েছে।
যে প্রাথমিক সত্যতায় পরোয়ানা জারি: ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর এডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন প্রাথমিক সত্যতার ভিত্তিতেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হচ্ছে। মূলত ছাত্র-জনতাকে সমূলে বা আংশিকভাবে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য; তাদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের জন্য এবং এপিসি ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে নিরস্ত্র সিভিলিয়ানদের হত্যা করার জন্য। শুধু হত্যাই করা হয়নি, মরদেহগুলোকে বিকৃত করা ও গুম করা, জানাজা করতে না দেয়া, ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করতে না দেয়াসহ যত মানবেতর অপরাধ আছে, তারা সেগুলো করেছে। ঠাণ্ডা মাথায় নিরীহ শিক্ষার্থী ও ছাত্র- জনতাকে হত্যা করার বহু প্রমাণ মিলেছে। শুধুমাত্র তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হচ্ছে।
এর আগে গত ১৭ই অক্টোবর জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পৃথক মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।