Banglar Chokh | বাংলার চোখ

যশোরে ৭৩২ মন্দিরে দেবীদুর্গার আগমনী সূচনালগ্ন মহালয়ায় ক্ষণ গণনা শুরু

সারাবাংলা

মালেকুজ্জামান কাকা,যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০১:৪১, ১৫ অক্টোবর ২০২৩

সর্বশেষ

যশোরে ৭৩২ মন্দিরে দেবীদুর্গার আগমনী সূচনালগ্ন মহালয়ায় ক্ষণ গণনা শুরু

নিজস্ব ছবি

যশোরে ৭৩২ মন্দিরে দেবীদুর্গার আগমনের সূচনালগ্ন মহালয়ার মধ্যদিয়ে ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। 

যশোরে এবার ৭৩২টি মন্দির ও মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর জেলার ৮ উপজেলায় ৭২৩ মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। ইতিমধ্যে প্রতিমা নির্মাণ ‍শেষ হয়েছে। এখন চলছে রং-তুলির আঁচড়ে দেবীর প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলাসহ মন্দির ও মন্ডপে চলছে আলোকসজ্জার কাজ।

শনিবার (১৪ অক্টোবর) মহালয়ার মধ্যদিয়ে দুর্গাপূজার ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। মহালয়ার দিনের শুরুতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শ্রীশ্রী চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার মর্ত্যলোকে আগমনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। শারদীয় দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো এই মহালয়া।  
সৌর আশ্বিনের কৃষ্ণপক্ষের নাম ‘মহালয়া’। ‘মহালয়া’ কথাটি এসেছে মহালয় থেকে। মহালয়ের অর্থ পরমাত্মা। বৃহৎ আলয়। সৌর আশ্বিনের কৃষ্ণপক্ষের নাম মহালয়। দুর্গোৎসবের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পর্বের একটি মহালয়া। অন্য দুটি হচ্ছে বোধন ও সন্ধিপূজা।

আগামী ২০ অক্টোবর ষষ্ঠীতে দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে পাঁচদিনের শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। ২১ অক্টোবর সপ্তমী, ২২ অক্টোবর মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা, ২৩ অক্টোবর মহানবমী এবং ২৪ অক্টোবর বিজয় দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন ও বিজয়া শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে শেষ হবে এই বর্ণিল উৎসব।

যশোরের শিল্পী গোপাল চন্দ্র পাল জানান, প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ। এখন রঙ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে বিভিন্ন রঙে মায়ের প্রতিমা সাজিয়ে তোলা হবে। তিনিসহ তার বেশ কয়েকজন সহযোগী শিল্পী প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কাজ করছেন। তবে শনিবার থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ চলবে। আশা করছেন পঞ্চমীতেই প্রতিমাগুলো মণ্ডপে পৌঁছে দেওয়া হবে।

যশোর রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী জ্ঞান প্রকাশানন্দ মহারাজ জানান, শাস্ত্রমতে এ বছর দেবীর আগমন ঘটকে (ঘোড়া) এবং কৈলাসে ফিরে যাবেনও ঘটকে। দেবীর ঘোড়ায় যাতায়াতের ফল হল ‘ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে’ অর্থাৎ সবকিছু ছত্রভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। নানা গোলমাল, দাঙ্গাহাঙ্গামা, ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট দ্বারা বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলা ঘটে থাকে। ঘোড়া ছটফটে প্রাণি। তাই সে যখন যায়, সব কিছু ছত্রভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এতে ফসল নষ্ট হওয়ার এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা ও খরা দেখা দিতে পারে। মহামারি ও রাজনৈতিক অস্থিরতাও হতে পারে।
যশোর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ জানান, এ বছর যশোর জেলার আটটি উপজেলায় গত বছরের চেয়ে ৯টি বেড়ে ৭৩২টি মন্দির ও মন্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন চলছে। এরমধ্যে যশোর সদর উপজেলা এলাকায় ১৬৭টি মন্দির ও মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে পৌর এলাকায় পূজা হবে ৫০টি মন্দিরে, অভয়নগর উপজেলায় ১৩৪টি, এরমধ্যে পৌর এলাকায় ২০টি, মণিরামপুরে ৯৯টি, পৌর এলাকায় ৯টি, কেশবপুরে ৯৮টি, পৌর এলাকায় ৯টি, বাঘারপাড়ায় ৯৭টি, পৌর এলাকায় ৪টি, ঝিকরগাছায় ৫৬টি, পৌর এলাকায় ৯টি, চৌগাছায় ৪৯টি, পৌর এলাকায় সাতটি ও শার্শায় ৩২টি, এরমধ্যে পৌর এলাকায় চারটি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
মন্দিরে ও মন্ডপে প্রতীমা তৈরির কাজে ব্যস্ত ভাস্কররা। আয়োজকরাও বর্ণিল আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে। এখন শুধু অপেক্ষা সেই মাহেন্দ্রক্ষণের। ছয় দিন পরেই চারিদিকে ধ্বণিত হবে ‘রূপং দেহি, যশ দেহি, জয়ং দেহি, দিশো দেহি মন্ত্র উচ্চারণ।
উল্লেখ্য, মহিষাসুরমর্দিনী দেবী দুর্গা সমস্ত অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীক রূপে পূজিত। মহামায়া অসীম শক্তির উৎস। পুরাণ মতে, শিবের বর অনুযায়ী কোন মানুষ বা দেবতা কখনো মহিষাসুরকে হত্যা করতে পারবে না। ফলত অসীম হ্মমতাশালী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করে এবং বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ডের অধীশ্বর হতে চায়। সুর অসুরের দ্বন্ধে মহালয়ার এদিনে, দুর্গতীনাশিনী দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান।
শাস্ত্রমতে, মহালয়ার দুটি পর্ব রয়েছে, একটি পিতৃপক্ষ, অন্যটি দেবীপক্ষ। অমাবস্যা তিথিতে পিতৃপক্ষের শেষ হয়, আর প্রতিপদ তিথিতে শুরু হয় দেবী পক্ষ। দেবীপক্ষ তথা মহালায়ার এদিন মত আত্মীয়স্বজন ও পূর্বপুরুষদের আত্মার মঙ্গল কামনায় গঙ্গাতীরে প্রার্থণা করেন ভক্তরা। মহালয়ার আর একটি দিক হচ্ছে এই মহালয়া তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপূরুষের স্মরণ করে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন। সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্মাদের মর্ত্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়। প্রয়াত আত্মার যে সমাবেশ হয়, তাকে মহালয়া বলা হয়। মহালয় থেকে মহালয়া। পিতৃপক্ষেরও শেষদিন এটি।
ধর্মীয় বিশ্বাস মতে, দেবীপক্ষের আগের কৃষ্ণা প্রতিপদে মর্ত্যধামে নেমে আসেন পিতৃপুরুষরা। অপেক্ষা করেন উত্তরসূরিদের কাছ থেকে তিল, তুলসী, জল পাওয়ার। মহালয়ার দিন অমাবস্যায় তাদের উদ্দেশ্যে তিল, তুলসী, জলদানই তর্পণ। তাই এই পুণ্যতিথিতে তাদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা অর্পণ করেন সনাতন ধর্মবিশ্বাসীরা।
এদিন, মহালয়ার শুভক্ষণে সনাতন ধর্মীয় আচারানুষ্ঠান আর বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণে যশোরে তিল তর্পণ অনুষ্ঠানসহ প্রার্থনা ও নানা ধর্মীয় কর্মসূচি পালন করা হয়। এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শোক, তাপ, দুঃখ, অমঙ্গল, অন্ধকারহরণ করে শুভ, মঙ্গল, আনন্দ প্রদানকারী ও আলোর দিশারী অসুরবিনাশিনী মা’কে হিমালয় থেকে মর্ত্যে বরণ করে নেয়া হয়।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়