Banglar Chokh | বাংলার চোখ

শেরপুরে বন্যায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত,মৃত্যু ৪ জনের

সারাবাংলা

শাহরিয়ার মিল্টন, শেরপুর থেকে

প্রকাশিত: ০০:৫৫, ৬ অক্টোবর ২০২৪

আপডেট: ০১:৩৮, ৬ অক্টোবর ২০২৪

সর্বশেষ

শেরপুরে বন্যায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত,মৃত্যু ৪ জনের

ছবি: বাংলার চোখ

 টানা ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট শেরপুর জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।  ঝিনাইগাতী এবং নালিতাবাড়ী উপজেলার সবক’টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চেল্লাখালী ও ভোগাই নদীর বাঁধের অন্তত সাত স্থান ভেঙে নদীর দুই কূল উপচে ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর ও নালিতাবাড়ী পৌর এলাকাসহ শ্রীবরদী উপজেলার শতাধিক গ্রাম ডুবে গেছে। এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে শেরপুরে ৪ জন নিহত হয়েছে।

এরা হলেন. নালিতাবাড়ী উপজেলার খলিশাকুড়ি গ্রামের খলিলুর রহমান (৬৫), আন্ধারুপাড়া গ্রামের  ইদ্রিস আলী (৭৫), বাগবোড় বালুরচর গ্রামের রমিজা বেগম (৫০) ও  ঝিনাইগাতীর উপজেলার সন্ধাকুড়া গ্রামের অজ্ঞাত একজনের পরিচয় জানা যায়নি। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নালিতাবাড়ী থানার ওসি মো. ছানোয়ার হোসেন ।
বন্যার পানি উজানে কিছুটা কমতে শুরু করলেও ভাটি এলাকায় আরো অন্তত ৫০ গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এপর্যন্ত ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানি বন্দি হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে।এতে  চরম কষ্টের মধ্যে পড়েছেন লোকজন। এদিকে নতুন করে আরও দুটি উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হওয়া ইউনিয়নগুলো হলো, শেরপুর সদর উপজেলার ধলা, পাকুরিয়া ও গাজির খামার ইউনিয়ন। এ ছাড়া নকলা উপজেলার গনপদ্দি, উরফা ও নকলা ইউনিয়ন।সেনাবাহিনী, পুলিশ ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে বন্যায় আটকে পড়াদের উদ্ধারে অভিযান চললেও পানির প্রবল স্রোত আর পর্যাপ্ত নৌযানের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কাজ। নালিতাবাড়ীর ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর ও ঝিনাইগাতীর মহারশির বিভিন্ন স্থানের বাঁধে ব্যাপক ভাঙন হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে শেরপুর-নালিতাবাড়ী ভায়া গাজিরখামার সড়ক, শেরপুর-নালিতাবাড়ী ভায়া তিনআনী সড়ক, নালিতাবাড়ী-নাকুগাঁও স্থলবন্দর সড়কসহ জেলার প্রধান গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ১০টি সড়ক। বিধ্বস্ত হয়েছে অসংখ্য গ্রামীণ পাকা ও কাঁচা সড়ক। ভেসে গেছে এসব এলাকার সব পুকুরের মাছ। সেইসঙ্গে কারও কারও গবাদি পশু ভেসে গেছে, নষ্ট হয়ে গেছে উঠতি আমনের খেত। বিভিন্ন স্থানে বানের পানিতে ধসে ও ভেসে গেছে কাঁচা ঘর-বাড়ি। পানিতে ভাসছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র। এসব এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কিছু আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও তা অপর্যাপ্ত এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় অনেকে আসতে পারছেন না।বন্যার্ত এলাকায় খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। রাস্তাঘাট ব্রিজ কালভার্ট পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলেও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মানুষ।
জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত জেলায় ৭ হাজার ৭শ হেক্টর জমির আমন ধান সম্পূর্ণ পানির নীচে এবং ৯ হাজার ৭শ হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ আংশিক পানির নীচে তলিয়ে গেছে। ৬শ হেক্টর জমির শীতকালীন সবজি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদ রানা বলেন, নালিতাবাড়ীতে হঠাৎ পাহাড়ি ঢলে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে এলাকার মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঢলের পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ জানা যাবে। আমরা বন্যার্তদের পাশে আছি। তাদের মাঝে জরুরিভিত্তিতে শুকনো খাবার বিতরণসহ উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।
 জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, শেরপুরের বন্যা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে বন্যার্তদের শুকনো খাবার ও গো খাদ্যের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান বলেন, ‘শেরপুরের তিন নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত করা হবে।’

সর্বশেষ

জনপ্রিয়