ছবি:সংগৃহীত
চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় তেলবাহী জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়ম কর্পোরেশন (বিপিসি)। রোববার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিপিসির সচিব এটিএম সেলিম সাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটিতে ইস্টার্ন রিফাইনারী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শরিফ হাসনাতকে আহ্বায়ক ও সংস্থাটির উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্ল্যানিং ও শিপিং) মো. মোস্তাফিজার রহমানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। তাদেরকে আজকের (৩০ সেপ্টেম্বরের) মধ্যেই অগ্নিদুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে বিপিসির চেয়ারম্যানকে জমা দিতে বলা হয়েছে।
কমিটির অন্যান্যরা হলেন- বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (কার্গো সুপারভিশন অ্যান্ড অপারেশন) ক্যাপ্টেন জামাল হোসেন তালুকদার, বিপিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন) মো. জাহিদ হোসাইন, মেঘনা পেট্রোলিয়ম লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন), পদ্মা অয়েল কোম্পানী লিমিটেড উপ-মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) আসিফ মালিক ও যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন)।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর ডলফিন জেটি এলাকায় বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের বাংলার জ্যোতি নামে একটি তেলবাহী জাহাজে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ইস্টার্ন রিফাইনারির জেটিতে খালাসরত অবস্থায় এ বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় একজন মারা গেছে। দুই জন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সোমবার সকাল ১১ টায় বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ওয়েল ট্যাঙ্কারে বাংলার জ্যোতিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের মাধ্যমে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। জাহাজের সামনের দিকের পেইন্ট স্টোর রুম থেকে এ ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের ঘটনার সময় জাহাজটিতে নাবিক, ডেক ক্যাডেট, ওয়ার্কশপের কর্মচারী সহ চল্লিশ জন ছিল। হঠাৎ করেই বিস্ফোরণের ঘটনার পর জাহাজ থেকে দ্রুত নেমে আসে সবাই।
মূলত ১১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল নিয়ে ডলফিন জেটিতে নোঙর করে বাংলার জ্যোতি। ইস্টার্ন রিফাইনারিতে ক্রুড অয়েল আনলোড করা ও হয়েছিল। এক হাজার মেট্রিক টনের মত তেল খালাস হওয়ার পরে ঘটে বিস্ফোরণের ঘটনা। বিস্ফোরণের খবর শুনেই নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও বন্দরের দশটি ফায়ার টাগবোর্ট আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে। ফায়ার সার্ভিসের ও আটটি ইউনিট ও আগুন নিয়ন্ত্রণে অংশগ্রহণ করে। হঠাৎ করেই কিছু বুঝে উঠার আগেই জাহাজের সামনের পেইন্ট রুম থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।
এদিকে, আগুন লাগার ঘটনায় দুই জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া একজন এখনো নিখোঁজ আছেন।
নিহতদের একজন জাহাজটির ডেক ক্যাডেট সৌরভ। অন্যজনের ছিন্নবিচ্ছিন্ন মরদেহ শনাক্ত করা যায়নি।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার মাসুদ ইকবাল বলেন, ক্যাডেট সৌরভের ঝলসানো মরদেহ একটি পাইপের সঙ্গে ঝুলে ছিল। বিস্ফোরণে ছড়িয়ে পড়া আরেকজনের দেহাংশ আশপাশে পাওয়া গেছে।
শিপিং করপোরেশনের নাবিকদের সংগঠন সি ম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ বলছেন, এই দুর্ঘটনায় নিখোঁজের তালিকায় ছিলেন ক্যাডেট সৌরভ, ফোরম্যান নুরুল ইসলাম (৪৫) ও ক্যাজুয়াল স্টাফ হারুন। এক্ষেত্রে খুঁজে পাওয়া অন্য দেহাংশগুলো নুরুল ইসলাম কিংবা হারুনের হওয়ার কথা।
জাহাজটি বন্দরের ইস্টার্ন রিফাইনারি ঘাটে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল খালাস করছিল। এতে ১১ হাজার ৭০০ টন অপরিশোধিত তেল ছিল। আজ বেলা পৌনে ১১টার দিকে এর সামনের অংশে বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়।
খবর পেয়ে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
বন্দরের কর্মকর্তারা বলছেন, আগুন লাগার খবরে তখনি বন্দর কর্তৃপক্ষের পাঁচটি ও নৌবাহিনীর পাঁচটি টাগবোট ঘটনাস্থলে যায়।