Banglar Chokh | বাংলার চোখ

থামছে না সিন্ডিকেট, পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে অসহায় সরকার

কর্পোরেট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:০৮, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ

থামছে না সিন্ডিকেট, পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে অসহায় সরকার

.

নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে একপ্রকার অসহায় সরকার। গত ১৬ বছর যারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করেছে, মূলত তাদের কারসাজিতে এখনো পণ্যের দাম বাড়ছে পাগলা ঘোড়ার গতিতে। পরিস্থিতি এমন-মাসের ব্যবধানে ভোজ্যতেল লিটারে সর্বোচ্চ ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। হিমাগারের ৪০ টাকা কেজি দরের আলু ভোক্তা কিনছেন ৮০ টাকায়। ৪৮-৫২ টাকার পেঁয়াজ খুচরায় এসে ১২০ টাকা হয়ে যাচ্ছে। আর চাল কিনতে ক্রেতার বাড়তি গুনতে হচ্ছে ২-৬ টাকা। পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যের দামও আকাশচুম্বী। এমনইভাবে প্রতিবছর ভোক্তাকে জিম্মি করে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ওই চক্রের বিরুদ্ধে কোনো সরকারই ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এতে বাজারে বহাল তবিয়তে মুনাফা লুটছে সেই সিন্ডিকেট।

এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে একাধিক পণ্য আমদানিতে শুল্কছাড় দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কিছু পণ্যের শূন্য শুল্ক রাখা হয়েছে। এছাড়া পণ্যের দাম সহনীয় করতে কঠোরতায় না গিয়ে সরকার ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের সুবিধা দিচ্ছে। পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন উঠিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। ব্যাংক থেকে যে কোনো পরিমাণ ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করতে পারবেন। এজন্য পর্যাপ্ত ডলারের সরবরাহও নিশ্চিত করা হচ্ছে। তবে এতকিছুর পরও বাজারে পণ্যের দাম কমানো যাচ্ছে না। বরং সরকারের দেওয়া এসব সুবিধা ব্যবসায়ীদের পকেটে চলে যাচ্ছে।

কয়েক মাস ধরে হুহু করে বাড়ছে আলুর দাম। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার আলু আমদানিতে শুল্কহার ২৫ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করেছে। কম শুল্কের আলুও দেশের বাজারে এসেছে। পাশাপাশি দেশীয় আলু বাজারে ভরপুর। তারপরও কমছে না দাম। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরের আলু হিমাগার পর্যায় থেকে দাম বাড়িয়ে ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। সেই আলু পাইকারি বাজার হয়ে খুচরা পর্যায়ে ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগেও ৫৫-৬০ টাকা ছিল। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, কোল্ড স্টোরেজে যারা আলু সংরক্ষণ করছেন, তারা এখন দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। যে কারণে আলুর দাম বেশি বেড়েছে। এখানে গুটিকয়েক ব্যবসায়ী আছেন, যারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন।

অন্যদিকে পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করেছে সরকার। তবে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে পেঁয়াজের কেজি এখনো খুচরা বাজারে ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কমিশন বাণিজ্যের নামে বাড়তি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে পুরোনো সেই সিন্ডিকেট চক্র। আমদানি করা কেজিপ্রতি ৪৮ টাকার পেঁয়াজ খরচ ধরে ৫১ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু সেই পেঁয়াজ কমিশন বাণিজ্যের নামে আড়তে পাঠানো হচ্ছে। আড়ত পর্যায়ে কেজিপ্রতি ১০৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর আড়ত থেকে পাইকারি ও খুচরা বাজারে আসছে। খুচরায় বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১২০-১৩০ টাকা, যা এক মাস আগেও ৯০-১০০ টাকা ছিল।

এদিকে তেলের দাম সহনীয় রাখতে ১৭ অক্টোবর পাম ও সয়াবিন তেলের মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ে সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি দেওয়া হয়। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সুবিধা কার্যকর থাকবে। তবে মাসের ব্যবধানে লিটারে ২০ টাকা বেড়ে খোলা সয়াবিন খুচরা বাজারে ১৮৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর লিটারে ৩ টাকা বেড়ে বোতলজাত বিক্রি হচ্ছে ১৬৭-১৭০ টাকা। সঙ্গে ১৫ দিনের ব্যবধানে পাম তেল ও রাইসব্রান তেলের দামও লিটারে ৬ থেকে ২০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে চার থেকে পাঁচটি কোম্পানি। তাদের কারসাজিতে এখনো জিম্মি ভোক্তা।

 কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান  বলেন, কোনো সরকারই বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা ছিল সিন্ডিকেট ভাঙবে। কিন্তু সেটাও দেখা যাচ্ছে না। সরকার গঠনের পর চাঁদাবাজি বন্ধ হওয়ায় হঠাৎ কিছু পণ্যের দাম কমেছিল। তবে কয়েকদিন পরই চাঁদাবাজি হাতবদল হওয়ায় ফের পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যে পুরোনো সেই সিন্ডকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বাড়িয়েছে পণ্যের দাম। এতে নাজেহাল ভোক্তা। তিনি বলেন, পণ্যের দাম কে বাড়ায়, কারা সিন্ডিকেট করে, তা সরকারের কাছে সব তথ্য আছে। ব্যবস্থা নিতে পারলে দাম কমবে। তবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ভর করেছে সব গাফিলতি।

সম্প্রতি এ নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে এক বৈঠক হয়েছে। বৈঠকসূত্রে জানা যায়, পণ্যের দাম কমাতে সরকার কঠোর অবস্থানে না গিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমোঝতার দিকে হাঁটছে। বাজার তদারকিতে হুমকিধামকি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে বাজার মনিটরিংয়ে একপ্রকার পিছু হটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বড় কয়েক আমদানিকারকের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ তিনটি কাজ করতে গিয়ে নীতিনির্ধারকরা দেখবেন বাজারে পণ্যের দাম যৌক্তিক নাকি অযৌক্তিক পর্যায়ে আছে। পাশাপাশি বাজারে হস্তক্ষেপ করা দরকার আছে কি না, তা বিশ্লেষণ করে বের করবেন। এতেও যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে কঠোর অবস্থানে গিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হবে। এতে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীদের পক্ষেই যাবে। সিন্ডিকেট চক্র তাদের কারসাজি আরও বাড়াবে।

অন্যদিকে রাজধানীর পেঁয়াজের বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজার। পেঁয়াজ আমদানিকারকরা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাজধানীর এই আড়তে পেঁয়াজ পাঠায় কমিশনে বিক্রির জন্য। সেখানে আমদানিকারক ও পাইকারি আড়তদার মিলে ৪৮ টাকার পেঁয়াজ ১০৫ টাকায় বিক্রি করে। এছাড়া দেশে ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তিন থেকে চারটি কোম্পানি। তারা দাম বাড়ালেই তেলের দাম বেড়ে যায়।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সরকার ইতোমধ্যে কিছু দ্রব্যাদির ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এতে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, জনগণের কল্যাণের জন্য জনগণের মালিকানাধীন রাষ্ট্রে জনগণের পক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করার এখতিয়ার ও ক্ষমতা সরকারের আছে। তাই সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করলে এতে সংকট বা সমস্যায় পড়ার কোনো কারণ নেই।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়